Islamic News BD - The Lesson of Peace
রমজান রামাযানের ভুল-ত্রুটি
সোমবার, ০৩ মে ২০২১ ২২:০৭ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মাহে রামাযান আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বরকতময় মাস। এ মাসকে আল্লাহ্ তাআলা খুবই ভালবাসেন। এমাসের মর্যাদায় তিনি তাঁর রহমতের ভাণ্ডার উন্মোচন করে দেন। করুণা ও নেয়ামতের আধার জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেন। শাস্তি ও গযবের আবাস জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন। আর মানুষের চির শত্রু প্রকাশ্য দুশমন শয়তানকে শৃঙ্খলবদ্ধ করেন। যাতে করে মানুষ তাঁর রহমত, করুণা ও মাগফিরাত লাভে ধন্য হয়। জান্নাতের কর্ম করে জান্নাতের অধিবাসী হয় আর জাহান্নামকে ভয় করে ও শয়তান থেকে দূরে থাকে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলেও সত্য কথা যে, বর্তমানে মানুষ মাহে রামাযানে ছিয়াম আদায় করে ঠিকই কিন্তু তাদের ছিয়াম তাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারে না। এ মাসে তাদের অবস্থা দেখলে বুঝা যায়না যে, তারা কি সত্যই আল্লাহর আনুগত্য করছে না শয়তানের আনুগত্য করছে। রোজাদারের সংখ্যা অগণিত। কিন্তু তাদের মাঝে জান্নাতী কর্মের প্রবণতা খুবই কম। আল্লাহর জান্নাতের খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অনীহাই যেন বেশী। আর জাহান্নামের বন্ধ দরজাকে খোলার জন্য করাঘাত করতেই বেশী ব্যস্ত। শয়তানকে শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয়েছে সত্য কিন্তু আজ মানুষই যে বড় শয়তান সেজে বসে আছে। শয়তানী কাজ-কর্ম করার জন্য শয়তানের প্ররোচনার দরকার নেই। তাই তো কিছু লোকের কার্যকলাপ দেখে শয়তানও তাদের থেকে লজ্জাবোধ করে।

রামাযান মাসে মানুষ সাধারণত: যে সমস্ত শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয় নিন্মে তার কিছু বিবরণ করা হল:

১) রাত জাগা ও নিদ্রায় দিন কাটানো:
এ অভ্যাসের কারণে বান্দা বিভিন্ন ধরণের কল্যাণ থেতে মাহরূম হয়ে যায়। কখনো এর কারণে জামাতের সাথে সালাত ছুটে যায় বা সালাতের সময়ও পার হয়ে যায়।

২) রামাযানে খাদ্য-পানীয়তে বাড়াবাড়ি করা:
অনেক মানুষের কাছে রামাযান যেন খানাপিনার ব্যাপারে প্রতিযোগিতার মওসুমে রূপান্তরিত হয়েছে। অথচ রামাযান গরীব-দুঃখীর অভাব ও দুঃখ অনটন অনুধাবন করার মওসুম।

৩) আগেভাগে সাহুর খেয়ে ফেলা:
অনেক মানুষ আগেভাগে সাহুর খেয়ে ফেলে। রাত বারোটা বা একটার দিকে সাহুর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফলে সে কয়েক ধরণের ত্র“টি করে। যেমন, সে সুন্নাত বিরোধী কাজ করে, শেষ রাতে সাহুর খাওয়ার বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। আর যদি তার ফজরের ফরয ছালাত ছুটে যায় তবে আরও বড় ধরণের অপরাধ সে করে বসল। রাসূলুল্লাহ বলেছেন

তোমরা সাহুর খাও কারণ সাহুরে বরকত রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)
অন্য হাদীছে বলা হয়েছে:
আমাদের ও আহলুল কিতাব (ইহুদী-খ্রিষ্টানদের) ছিয়ামের মাঝে পার্থক্য হল সহুর খাওয়া। অর্থাৎ তারা সাহুর না খেয়ে ছিয়াম পালন করে আর আমরা সাহুর খেয়ে ছিয়াম পালন করি। (মুসলিম হাদীছ নং ১০৯৬, তিরমিযী হাদীছ নং ৭০৮।)

৪) দেরী করে ইফতার করা: 
অনেক মানুষ সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অধিক সতর্কতার যুক্তিতে দুতিন মিনিট দেরীতে ইফতার করে। এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসার অনুসরণ ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

ততদিন যাবত আমার উম্মত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতদিন আগেভাগে (সূর্য ডুবার সাথে সাথে) ইফতার করবে। (সহীহ বুখারী)
হাদীছে কুদসীতে এসেছে:
আল্লাহ বলেছেন বান্দদের মধ্যে ঐ বান্দা আমার নিকট অধিক প্রিয় যে আগে ভাগে ইফতার করে। (তিরমিযী)

৫) খারাপ চরিত্র ও অসৎ ব্যবহার করা:
অনেক রোজাদার রোজা রেখেও দ্রুত রেগে যায়, অসৎ আচরণ করে, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। মিথ্যা, গীবত ও চুগলখোরিতে লিপ্ত হয়। অথচ এরূপ করা ছিয়ামের উপকারিতা ও হিকমতের পরিপন্থী। এর মাধ্যমে ছিয়ামের ছওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ছিয়াম ব্যক্তিকে পবিত্র করে, তার চরিত্রকে সুন্দর করে, মুসলিম ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে ছবর-ধৈর্য, দয়া-অনুকম্পা ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
যখন তোমাদের কারো ছিয়ামের দিন উপস্থিত হয় তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উঁচু কণ্ঠে কথা না বলে অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সহিত লড়াই-ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি রোযা আছি।। (বুখারী মুসলিম)
অন্য একটি হাদীছে এসেছে:
যে ব্যক্তি ছিয়াম রত অবস্থায় মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করে না, আল্লাহর কোনই দরকার নেই তার পানাহার ত্যাগ করাতে। (বুখারী)

৬) রোযার ফযীলত ও তার বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা:
রোযাদারদের অনেকেই রোযার ফযীলত, মাসআলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধান সম্পর্কে কোনই জ্ঞান রাখে না। রোযা অবস্থায় কি করণীয় কি বর্জনীয়, কি করলে ছিয়াম হালকা হয়ে যায়, কিসে ছিয়াম নষ্ট হয়ে যায়, এ মাসে কোন ধরণের কাজ আল্লাহ্ পছন্দ করেন সে সম্পর্কে মোটেও জ্ঞান রাখে না বা জ্ঞান রাখার প্রয়োজন অনুভব করে না।

৭) রাতে স্বপ্নদোষ হলে গোসল করতে দেরী করা:
অনেকে লজ্জা বশত: রাতে গোসল করে না। আর এভাবে ফজর ছালাত পরিত্যাগ করে বা সূর্যোদয়ের পর গোসল করে ফজর পড়ে। এটা নিতান্তই অজ্ঞতা ও গুনাহর কাজ। স্বপ্নদোষ হলে বা স্বামী-স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে নাপাক হলে, নাপাকী অবস্থাতেই সাহুর খাওয়া যায় এবং রোযার নিয়ত করা যায়। তবে অবশ্যই ফযর ছালাতের আগে গোসল করতে হবে এবং ছালাত আদায় করতে হবে।

৭) মুখে উচ্চারণ করে রোযার নিয়ত পাঠ করাঃ
ছিয়ামের জন্য নিয়ত বা সংকল্প করা জরুরী। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
যে ব্যক্তি (প্রথম) ফজরের পূর্বে নিয়ত করবেনা তার ছিয়াম হবে না। (নাসাঈ)
নিয়্যাহ-আরবী শব্দ, উহার শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা, সংকল্প ও মনে মনে কিছুর আকাঙ্খা রাখা। উহা অন্তরের কাজ (মুখের নয়)। (দেখুন লিসানুল আরব, ১৮ খণ্ড ৩৪৩ পৃঃ) শরীয়ত আমাদেরকে প্রতিটি ইবাদতের জন্য নিয়ত করতে বলেছে, কোথাও নিয়ত মুখে বলতে বলা হয় নি। অতএব নাওয়াইতু শব্দের মাধ্যমে নিয়ত বলা একটি অহেতুক কাজ। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে জঘন্যতম বিদআত। কেননা এই অহেতুক কাজটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবাহবর্গ, তাবেঈন, আত্বাউত তাবেঈন ও চার ইমামের কেউ-ই করেন নি। এ মর্মে কুরআন-সুন্নাতে কোন দলীলও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

৮) তারাবীহ ছালাত আদায় না করা:
তারাবীহ ছালাত আদায় না করে কোন অনর্থক কাজে লিপ্ত থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে তারাবীহ নামায না পড়ে ডিশ, ভিডিও, সিডি প্রভৃতির মাধ্যমে নাটক, সিনেমা ও অশ্লীল ছবি দেখে বা তাস, গুটি বোর্ড প্রভৃতি অনর্থক খেলা খেলে বা গল্প-গুজব করে সময় অতিবাহিত করা আরও বড় ধরণের অপরাধ ও পাপ।

৯) রামাযানের প্রথম দিকে ইবাদতে তৎপরতা প্রকাশ আর শেষের দিকে অলস হয়ে যাওয়া:
যার ফলে দেখা যায় রামাযান শুরু হলে নামাযীর সংখ্যা বা তারাবীতে মুছল্লীর সংখ্যায় মসজিদ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দিন গড়াতে থাকলে ধীরে ধীরে এ সংখ্যায় হ্রাস পেতে থাকে। অথচ এরূপ করা সুন্নাতে রাসূলের বিপরীত কাজ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকের তুলনায় ইবাদত-বন্দেগীতে এত বেশী তৎতপরতা অন্য দিনে দেখাতেন না।

১০) রামাযান শেষ হলে মসজিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা:
কিছু রোজাদার আছে রামাযান এলে ছালাত-ছিয়ামে ভালই অগ্রসর হয়। কিন্তু রামাযান শেষ হয়ে গেলে তাদেরকে