গভীর রাতে সুফি-দরবেশরা যে নামাজে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন, তার নাম তাহাজ্জুদ। আল্লাহ বলেন, হে নবী, রাতে তাহাজ্জুদ পড় ন। এ ইবাদত আপনার জন্য নফল। আশা করা যায়, আল্লাহ এর প্রতিদানে আপনাকে সম্মানের উঁচু চূড়া দান করবেন (সূরা আল ইসরা : ৭৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (স) বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। মুসলিম শরীফ হাদিস : ১১৬৭
তাহাজ্জুতের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন, আমার প্রভু প্রত্যেক রাতের শেষাংশে নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, যে কেউ আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তা কবুল করব, যে কেউ কিছু প্রার্থনা করবে, আমি তা প্রদান করব, যে কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি হাদিস ৫৯৬২)
নবী করিম (স) আরও বলেছেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তার স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি (তার স্ত্রী) তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যদি তিনি (স্ত্রী) ঘুম থেকে জাগ্রত হতে না চান, তা হলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেন। (আবু দাউদ ১৪৫০) দীর্ঘ তাহাজ্জুদ নামাজ ও তেলাওয়াতে রাসুলের (স) পা ফুলে যেত। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়তেন। আয়েশা (রা) বলেন, রাসুলের (স) অনুকরণে সাহাবিদের ঘর থেকে রাতে অন্ধকারে ভেসে আসত সুমধুর কোরআনের সুর। কান্নার বিগলিত ধ্বনি। বিশ্বখ্যাত অলি-দরবেশদের কেউই গভীর রাতে চোখের পানি না ঝরিয়ে আল্লাহর নৈকট্যলাভ করতে পারেননি। ইমাম গাজ্জালি, জালালউদ্দিন রুমি, শেখ সাদি, হাসান বসরি কিংবা রাবেয়া বসরি কেউই রাতজাগা ইবাদত ছাড়া অলি হয়ে উঠতে পারেননি। বিপরীতে আমাদের চোখ মরুভূমি। আল্লাহর ভয়ে মন গলে না, পরকালের চিন্তায় অশ্রু ঝরে না। গোনাহের আবরণে চোখের ঝরনা থেমে গেছে। রোজার এ দিনেও অলস ঘুমে রাত কাটাই, মেতে উঠি পাপের মহড়ায়। নিজের ঘরকে পাপমুক্ত রাখতে পারছি না।
সওয়াব অর্জনের চেয়ে জরুরি- পাপমুক্ত থাকা। আল্লাহ বলেন, সে-ই সফলকামী, যাকে জাহান্নামে থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (আল ইমরান : ১৮৫) পাপমুক্ত থেকে জান্নাতে যাওয়ার পথ প্রকৃত প্রস্তাবে সহজই। জান্নাতে যেতে হলে খুব বেশি সওয়াবের প্রয়োজন নেই। তবে সম্পূর্ণ গুনাহমুক্ত থাকতে হবে।