Islamic News BD - The Lesson of Peace
সুদ কম-বেশি সব সময়ের জন্যই নিষিদ্ধ
শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২ ১৫:১৩ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

দুনিয়ায় সবচেয়ে লোভনীয় জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক হচ্ছে সুদ। আল্লাহ তাআলা সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর আল্লাহর আনুগত্য করার প্রতি জোর দিয়েছেন। কোরআনুল কারিমে বহুগুণে বাড়িয়ে সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে যদি চক্রবৃদ্ধি হারে না হয়, তবে কি তা খাওয়া জায়েজ?

সুদ কম হোক আর বেশি হোক; ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে হোক অথবা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হোক; তা সর্বাবস্থায়ই হারাম। সুদ হারাম হওয়ার জন্য চক্রবৃদ্ধি হারে খাওয়া শর্ত নয়। যেভাবে যে পরিমাণেই হোক কোনোভাবেই সুদ খাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে সুদ খেতে নিষেধ করেছেন এবং জাহান্নামের আগুনকে ভয় করার কথা বলেছেন। সুদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوا الرِّبٰۤوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَۃً ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ  - وَ اتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡۤ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ক্রমবর্ধমান হারে (দ্বিগুণ-চতুর্গুণ বা চক্রবৃদ্ধি হারে) সূদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। আর তোমরা সেই আগুনকে ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০-১৩১) আয়াতের প্রসঙ্গিক আলোচনা

আগের আয়াতগুলোতে উহুদ যুদ্ধের আলোচনা চলছিল। উহুদ যুদ্ধের পরাজয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবাধ্যতা এবং পার্থিব সম্পদের প্রতি লোভের কারণে হয়েছিল। তাই এই আয়াত দুইটিতে দুনিয়ার লোভনীয় জিনিসের মধ্যে সর্বাধিক মারাত্মক সুদ থেকে নিষেধ এবং আল্লাহর আনুগত্য করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমর ইবনে আকইয়াশের জাহেলি যুগের কিছু সুদের কারবার ছিল; সে তা উসুল করা জন্য ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত ছিল। তারপর যখন উহুদ যুদ্ধের দিন আসল, সে জিজ্ঞাসা করল, আমার চাচাত ভাই অমুক কোথায়? লোকেরা বলতো উহুদের প্রান্তরে; আবার জিজ্ঞাসা করতো- অমুক কোথায়? তারা বলতো উহুদের প্রান্তরে; আবার জিজ্ঞাসা করতো- অমুক কোথায়? লোকেরা বলতো- সেও উহুদের প্রান্তরে।

এতে সে তার যুদ্ধাস্ত্র পরে নিয়ে উহুদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ে। মুসলিমগণ যখন তাকে দেখল তখন তারা বললো, আমর! তুমি আমাদের থেকে দূরে থাক। কিন্তু সে জবাব দিল- আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। তারপর সে যুদ্ধ করে আহত হলো। তাকে তার পরিবারের কাছে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হলো।

এ অবস্থায় হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে তার বোনকে বললেন, তুমি তাকে জিজ্ঞাসা কর সে কি জাতিকে বাঁচানোর জন্য, নাকি তাদের ক্রোধে শরিক হওয়ার জন্য, নাকি আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করেছে?

তখন আমর জবাবে বললো বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছি। তারপর তিনি মারা গেলেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করলেন অথচ আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত সালাত পড়ারও সুযোগ তার হয়নি। (আবু দাউদ)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সব সময় খুঁজে বেড়াতাম যে, আল্লাহ তাআলা উহুদের ঘটনার মাঝখানে সুদের কথা কেন নিয়ে আসলেন, এরপর যখন এ ঘটনা পড়লাম তখন আমার কাছে এ আয়াতকে এখানে আনার যোক্তিকতা স্পষ্ট হলো। (আল উজাব)

আয়াতের নির্দেশ

আলোচ্য আয়াতে সুদ খাওয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকগুণ বেশি অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি হারকে সুদ হারাম ও নিষিদ্ধ হওয়ার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অন্যান্য আয়াতে অত্যন্ত কঠোরভাবে সব সময় সুদ হারাম হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ আয়াতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া নিষেধ করার মধ্যে এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, সুদ গ্রহণে অভ্যস্ত ব্যক্তি যদি চক্রবৃদ্ধি সুদ থেকে বেঁচেও থাকে; তবে সুদের উপার্জনকে যখন পুনরায় সুদে খাটাবে, তখন অবশ্যই দ্বিগুণের দ্বিগুণ হতে থাকবে। যদিও সুদখোরদের পরিভাষায় একে চক্রবৃদ্ধি সুদ বলা হবে না। সারকথা হলো- সব সুদই পরিণামে দ্বিগুণের ওপর দ্বিগুন সুদ হয়ে থাকে। সুতরাং আয়াতে সবরকম সুদকেই নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,;তোমরা ধ্বংসকারী ৭টি বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! সে বিষয়গুলো কী তিনি বললেন-

১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা;

২. জাদু করা;

৩. যথার্থ কারণ ছাড়া আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করা;

৪. সুদ খাওয়া;

৫. অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের মাল খাওয়া বা ভোগ করা;

৬. যুদ্ধাবস্থায় জেহাদের ময়দান হতে পালিয়ে যাওয়া;

৭. পবিত্র মুসলিম নারীর উপর ব্যাভিচারের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।(বুখারি)

জাহান্নামের আগুনের হুশিয়ারি

দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের সেই আগুনকে ভয় করার কথা বলেছেন, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জাহান্নামের এ আগুন থেকে নিজেদের বাঁচাতে হাদিসে পাকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং মুমিন মুসমানের উচিত, সব সময় সুদ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সুদের কাজের ধারে কাছেও না যাওয়া। জাহান্নামের আগুনকে ভয় করা। আল্লাহর দেখানো পথে চলা। কোরআন-সুন্নার দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। যারা জড়িত তাদেরকে সুদমুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।