আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের সুরক্ষাকারী পুরুষ ও সুরক্ষাকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী; আল্লাহ তাদের সবার জন্য ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৫)
এ সবই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এ গুণের অধিকারী মুমিনদের জন্য ক্ষমার পাশাপাশি মহাপুরস্কার (জান্নাত) প্রস্তুত। কারণ মুমিনদের অন্যতম আরও কিছু আছে। যেমন, আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তার নির্দেশ মেনে চল। আর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। দিকনির্দেশনাটি আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে; এরাই সত্যবাদী। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৫)
আল্লাহর তাআলা তার এসব বান্দাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে সুনিশ্চিত জান্নাত রেখেছেন। এসব আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ মুমিন নারীর মর্যাদার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। তারাও পাবেন ঘোষিত মর্যাদা ও পুরস্কার।যারাই আল্লাহর বিধানের পূর্ণ আনুগত্য করবে তারাই প্রকৃত মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। মুমিন বান্দা যখন আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্যশীল হবে; তখন তাদের হৃদয়ে কোনো ধরণের পাপ দানা বাঁধতে পারবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ওই ব্যক্তি তার ঈমানকে দৃঢ় করলো যে কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসলো, কাউকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করলো, কাউকে কোনো কিছু দিল আল্লাহর জন্য আর কাউকে কোনো কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকল শুধু আল্লাহর জন্য। (তিরমিজি)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,মহব্বত ও দয়ার প্রতীক মুমিন। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারো সঙ্গে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না।(মুসনাদে আহমাদ
এসব মুমিনের জন্যই কি জান্নাতের সুসংবাদ! মুমিন মাত্রই আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি পেলে তাঁর আর কোনো চিন্তা নেই। ক্ষমা ও পুস্কার তার জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় মুমিন বান্দার ব্যক্তিগত কোনো কামনা-বাসনা থাকে না আর এমন ব্যক্তিদেরই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-
১. وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ بِاَنَّ لَهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ فَضۡلًا کَبِیۡرًا আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ (জান্নাত) রয়েছে। (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৭)
২. وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ وَ رِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের আল্লাহ এমন সব বাগানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে গুলোর নিচ দিয়ে নদ-নদী বয়ে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে আর তিনি তাদেরকে চিরস্থায়ী বাগানগুলোতে পবিত্র ঘরেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মহান সফলতা। (সুরা আত তাওবা: আয়াত ৭২)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত গুণগুলো নিজেদের মধ্যে অর্জন করা। বিনিময়ে মহান রবের ক্ষমা ও মহাপুরস্কার পেয়ে ধন্য হওয়া। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজেদের ঈমানকে মজবুত করা। কারণ উল্লেখিত গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের জন্যই রয়েছে সুনিশ্চিত জান্নাত। যে ঘোষণা আল্লাহ কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা করেছেন।আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উল্লেখিত গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জান্নাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়ে ধন্য হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।