Islamic News BD - The Lesson of Peace
ক্ষমা না চাইলে আল্লাহ রাগ হন কেন?
বুধবার, ২৫ মে ২০২২ ১৭:৪৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন। আল্লাহ তখনই সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হন যখন কোনো বান্দা অন্যায় করার পর তাওবা করে ক্ষমা চেয়ে আবার তার দিকে ফিরে আসে।

 ক্ষমা মহান আল্লাহ তাআলার একটি মহৎ গুণ। বান্দা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চায় তবে আল্লাহ কাকে ক্ষমা করবেন। শয়তান যখন মহান আল্লাহর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলো যে, আমি মানুষকে পথভ্রষ্ট করবো; তখন আল্লাহ ঘোষণা করেছিলেন, মানুষ অন্যায় করে আমার কাছে তাওবা করলে বা ক্ষমা চাইলেই আমি ক্ষমা করে দেবো। ক্ষমার মাধ্যমেই আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। ক্ষমায় রিজিক বাড়ে। ক্ষমায় সন্তানহীনের বংশ বৃদ্ধি হয়। কোরআনে ক্ষমার অসংখ্য নেয়ামতের বর্ণনা রয়েছে।

কিন্তু কোনো মানুষ যদি গুনাহ না করে, তবে সে কি তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে? কারণ সব মানুষ তো সমানভাবে গুনাহ করেন না। তাহলে বিনা গুনায় কেন মানুষ ক্ষমা চাইবে? নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে এমন এক প্রশ্নের সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।

নবিজীর তাওবা

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে নবিজীর আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-

আল্লাহ আপনার আগের এবং পরের সব ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরলপথে পরিচালিত করেন। (সুরা ফাতাহ : আয়াত ২)

কিন্তু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা করতেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, সবার তাওবাহ বা ক্ষমা প্রার্থনার ধরনও এক হবে না। ব্যক্তিভেদে তাওবার অবস্থা ও ধরন পরিবর্তন হয়।

একবার নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওবা করা বা গুনাহ মাফ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের-পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাহলে আপনি কেন প্রতিদিন এত বেশি তাওবা-ইসতেগফার করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-

আমি কি তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না (বুখারি মুসলিম)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু গুনাহ করলেই তাওবা ও ইসতেগফার করতে হয় এমনটি নয় বরং আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এ তাওবা-ইসতেগফার। এ কারণেই কোনো বান্দা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করেন তবে আল্লাহ রাগান্বিত হন।

সুতরাং যারা গুনাহ পরিত্যাগ করে চলেন বা গোনাহের কাজে কম লিপ্ত হন তাদের জন্য সহজ সমাধান হলো- প্রথমত :তাওবা-ইসতেগফার আল্লাহর নির্দেশ এবং কল্যাণ লাভের উপায়। তাই গুনাহ হোক কিংবা না হোক সব সময় তাওবা-ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।

দ্বিতীয়ত :তাওবা-ইসতেগফার নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত একান্ত আমল। সুন্নাতের অনুসরণে মর্যাদা বৃদ্ধিতে তাওবা-ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।

তৃতীয়ত :তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার বিষয়টিও নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। এ সুযোগ নষ্ট না করা

এছাড়াও আল্লামা আলুসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাওবাকারীদের মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী তাওবার ধরন কেমন হবে তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-

১. সাধারণ মানুষের তাওবা অন্যায় করলেই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া;

এমন অন্যায় ভবিষ্যতে পুনরায় না করার সংকল্প করা;

কোনোভাবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে গেলে তার প্রতিকার তথা ক্ষতিপূরণ দেওয়া;

প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তরে ক্ষতিপূরণের নিয়ত বা সদিচ্ছা পোষণ করা।

২. বিশিষ্ট ব্যক্তির তাওবা সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত থাকা;

যাবতীয় কুচিন্তা মন থেকে দূর করা;

আমলের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্জন করা।

৩. মর্যাদাবান ব্যক্তির তাওবা নিজেদের আমলের অবস্থার উন্নতিতে তাওবা করা;

সুতরাং ব্যক্তিভেদে সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে তাঁরই কাছে বেশি বেশি তাওবাহ করার বিকল্প নেই। এ তাওবা-ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনাই মর্যাদা ও সম্মান বাড়ানোর একমাত্র উপায়।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় অবস্থা ও অবস্থানভেদে সঠিকভাবে তাওবার করার এবং তাওবার মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধির তাওফিক দান করুন। আমিন।