Islamic News BD - The Lesson of Peace
আল্লাহর দরবারে যে নামাজি সম্পর্কে আলোচনা হয়
বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২ ১৭:৩০ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

আল্লাহ তাআলা এমন কিছু মানুষকে তার জিম্মায় রাখন; যাদের নাম তার মজলিশে আলোচনা করা হয়। দুনিয়ার নির্ধারিত কিছু ফরজ কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে মুমিন বান্দা এ মর্যাদার অধিকারী হয়। কী সেই ফরজ? কারাই বা আল্লাহ জিম্মায় থাকার সৌভাগ্যবান?

আল্লাহ তাআলা যাকে তার জিম্মায় রাখেন; তার না আছে কোনো ভয়; আর না আছে কোনো চিন্তা। বরং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তি তাঁর নূর দ্বারা আলোকিত ও বরকতময় করেন। তার মজলিশে ফেরেশতাদের সঙ্গে তিনি ওই বান্দার সম্পর্কে আলোচনা করেন। হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-

হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, মুমিন বান্দার জন্য সহজ ও ছোট্ট এ আমলটি হলো, দিনের শুরুতে ফজরের নামাজ পড়া। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বেন; ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিরাপত্তায় থাকবেন। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর মজলিশে আলোচনা করবেন। আর দিনটি হবে তাদের জন্য বরকতময়। হাদিসে পাকে এসেছে-

১. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকল। অতএব তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারিকে নষ্ট করো না। যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে তলব করে এনে উল্টো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (ইবনে মাজাহ, তালিকুর রাগিব, আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

২. হজরত সামুরাহ বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল; সে মহান আল্লাহর জিম্মায় রইল। (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

দিনের শুরুতে ফজর পড়ার উপকারিতা ফজর নামাজে দিন শুরু করা মুমিন বান্দা শুধু আল্লাহর নিরাপত্তা পাবে, এখানেই শেষ নয়, বরং তাদের জন্য রয়েচে চমৎকার উপকারিতা। রয়েছে নিরাপত্তা পাওয়ার সুন্নাতি দোয়া। তাহলো-

১. সারারাত নামাজে থাকার সমান নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ইশার নামাজ পড়লো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। (মুসলিম)

২. ফজর নামাজ হবে নূর নবিজী বলেছেন, যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ)

৩. জান্নাতের ঘোষণা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, (সে) জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর। (বুখারি)

৪. রিজিকে বরকত আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, সকাল বেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাঁধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বণ্টন করা হয়। ৫. সেরা বস্তু অর্জিত হয় ফজরের নামাজে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত নামাজ পড়ার মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়েও তা শ্রেষ্ঠ। (তিরিমিজি)

৬. আল্লাহর দরবারে নামাজির নাম আলোচনা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের দায়িত্বে থাকে তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফেরেশতাদেরকে প্রশ্ন করেন- আমার বান্দাদের কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদের নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাজরত ছিল। (বুখারি)

৭. ফজরের নামাজেই দিনের সূচনা বরকতময় হয়। ফজরের নামাজ দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের সব কাজে একটা বরকতময় সূচনা হয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। হাদিসে এসেছে-

হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্যে, তার সকাল বেলায় বরকত দান করুন। (তিরমিজি)

নিরাপত্তা পাওয়ার বিশেষ দোয়া নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর জিম্মায় থাকতে একটি দোয়া পড়তেন। তিনি তাঁর উম্মতকে আল্লাহর জিম্মায় থাকতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। যখনই তারা ঘর থেকে বের হবে, তখনই এ দোয়া পড়বে। তাহলো-

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি। অর্থ : আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি); আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় নেই; আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তিও নেই। (তিরমিজি, আবু দাউদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজর নামাজ যথাসময়ে আদায় করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। ফজরের নামাজ ও দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সব সময় আল্লাহ তাআলার জিম্মায় নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ফজরের নামাজ ও দোয়া পড়ার মাধ্যমে নিজেদের আল্লাহর জিম্মায় নিরাপদ রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।