আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম কান্না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। এক. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং দুই. যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় (নিরপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নিদ্রাহীন রাত কাটায়।’ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে মানুষকে কাঁদতে উৎসাহিত করেছেন। কান্না সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের ঘোষণা সুস্পষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ।
তাহলো- ১. وَ اَنَّهٗ هُوَ اَضۡحَکَ وَ اَبۡکٰی
‘আর নিশ্চয়ই তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান।’ (সুরা নজম : আয়াত ৪৩)
২. اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اٰدَمَ ٭ وَ مِمَّنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ۫ وَّ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡرَآءِیۡلَ ۫ وَ مِمَّنۡ هَدَیۡنَا وَ اجۡتَبَیۡنَا ؕ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُ الرَّحۡمٰنِ خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّ بُکِیًّا
‘এরাই সে সব নবি, আদম সন্তানের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদের আমি নূহের সঙ্গে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম।
আর ইবরাহিম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম। যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৫৮)
আল্লাহ তাআলা নেককার বান্দার প্রশংসা করে বলেন-
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا
‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১০৯)
জাতির সৎ লোকদের প্রশংসা করে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاکۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ
‘আর রাসুলের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চোখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৩)
কান্না সম্পর্কে মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেন-
اَفَمِنۡ هٰذَا الۡحَدِیۡثِ تَعۡجَبُوۡنَ وَ تَضۡحَکُوۡنَ وَ لَا تَبۡکُوۡنَ
‘তোমরা কি এ কথায় বিস্ময় বোধ করছ? আর হাসি-ঠাট্টা করছ! এবং কাঁদছ না!’ (সুরা নজম : আয়াত ৫৯-৬০) فَلۡیَضۡحَکُوۡا قَلِیۡلًا وَّ لۡیَبۡکُوۡا کَثِیۡرًا ۚ جَزَآءًۢ بِمَا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ
‘অতএব তারা অল্প হাসুক, আর বেশি কাঁদুক; কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে তার বিনিময় এ ধরনেরই হয়ে থাকে (সেজন্য তাঁদের কান্না করা উচিত)।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৮২)
আল্লাহর অবাধ্য বান্দাদের মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- فَمَا بَکَتۡ عَلَیۡهِمُ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَا کَانُوۡا مُنۡظَرِیۡنَ
‘এরপর আসমান ও জমিন তাদের জন্য কাঁদেনি এবং তারা অবকাশপ্রাপ্ত ছিল না।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২৯)
মুমিন মুসলমানের বোঝা উচিত, মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমের কান্না সম্পর্কিত আয়াতগুলো নাজিল করে এটিই বুঝিয়েছেন যে, আল্লাহর নেকট্য ও তাঁর কাছে মুক্তি পেতে হলে কান্নার বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে বেশি কান্নাকাটি করলেই মহান আল্লাহর কাছে মানুষের নাজাত ও মুক্তি মিলবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি কান্নার তাওফিক দান করুন। কোরআনের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।