Islamic News BD - The Lesson of Peace
যে ৪ গুণে মিলবে অনাবিল সুখ-শান্তি
বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৭:০০ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চমৎকার একটি ঘোষণা- যার মাঝে ৪টি গুণ থাকবে, তার হারানোর কিছু নেই। তার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দুনিয়াতে সে কোনো কিছু না পেলেও পরকালের সীমাহীন জীবনে তার জন্য থাকবে অনাবিল সুখ ও শান্তি। গুণ ৪টি কী?

দুনিয়া পরকালের শস্যক্ষেত্র। এ জীবনে মুমিনের সাময়িক কোনো অসুবিধা হলেও আল্লাহ তাআলা নেক আমলকারী ও উত্তম গুণের অধিকারীদের জন্য রেখেছেন পরকালের জীবনে চিরস্থায়ী সুখ। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমার মধ্যে চারটি গুণ বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খাওয়া-দাওয়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব ৩/১৬)

১. সত্যবাদিতা

মুমিন কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারে না। সত্যবাদিতা পবিত্র জীবন যাপন করার মৌলিক ভিত্তি। সত্যবাদী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাশীল হয়। ফলে সে বহু অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে অনায়াসেই বেঁচে থাকে। একজন সত্যবাদীর জীবন হয় ফুলের মতো সৌরভময়। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এটি ফুটে ওঠেছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যবাদিতার ব্যাপারে নানাভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন। কারণ, সত্য মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে জান্নাতে নিয়ে যায়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত সাফওয়ান ইবনে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করলো, মুমিন সাহসহীন বা ভীরু হতে পারে কি? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কৃপণ হতে পারে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মুমিন মিথ্যাবাদী হতে পারে কি? (এবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না । (মুআত্তা মালেক ১৮০৩)

২. আমানতদারীতা

আমানতদারীতা অনেক কঠিন জিনিস। এ গুণের অধিকারী হওয়াও কষ্টের। সৃষ্টির সূচনায় আল্লাহ তাঁর দ্বীনের আমানত সোপর্দ করার জন্য আসমান, জমিন, পাহাড় ও মানুষের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন। তখনকার সেই অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন-
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَّحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولاً আমরা আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার কাছে এই আমানত পেশ করেছিলাম। এরপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করলো এবং এ থেকে শংকিত হলো। কিন্তু মানুষ তা বহন করল। বস্ত্ততঃ সে অতিশয় জালেম ও অজ্ঞ। (সুরা আহযাব : আয়াত ৭২)
মানুষের আমানত রক্ষা করা কঠিন। এ অধ্যায়টি অনেক ব্যাপক। সাধারণত আমানত বলতে বুঝা যায়, একজন আরেক জনের কাছে পয়সা বা অন্য কোনো বস্তু আমানত রাখা। অথচ আমানত অনেক ব্যাপক। আমাদের কাছে দুই ধরনের আমানত আছে। আল্লাহর আমানত। তথা যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদের যথাযথ জাকাত আদায় করা। হজ-ওমরাহসহ আরো যত ইবাদত রয়েছে এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার কাছে আমানত। আর মানুষের আমানত হচ্ছে, কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা না করা। কেউ কারো কাছে কোনো সম্পদ আমানত রাখলে তাতে কোনো ধরনের হেরফের না করা। কেউ বিচারকের দায়িত্বে থাকলে যথাযথ আমানতদারীতার সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করা। যারা এ আমানত রক্ষা করতে পারবে, তাদের জন্য কোনো চিন্তা নেই। দুনিয়ার জীবনটা তাদের জন্য কঠিন হলেও পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনাবিল সুখ ও শান্তি।

৩. চারিত্রিক পবিত্রতা

চারিত্রিক পবিত্রতাই মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রিয় পাত্র বানিয়ে দেবেন এবং পরকালেও রয়েছে তার জন্য অনাবিল সুখ ও শান্তি। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোজাদার ও নামাজির পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। (তিরমিজি ২০০৩)

৪. খাওয়া-দাওয়ায় সতর্কতা

মানুষ তার খাদ্য তথা হালাল রুটি-রুজির ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক থাকবে। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, সে হালাল ছাড়া কোনো কিছুই উপার্জন করবে না। যদিও তা পরিমাণে কম হয় এবং নিজের দেহে কোনো হারাম জিনিস প্রবেশ করাবে না। হারাম খাওয়া কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। শুধু তা-ই নয়, যখন কেউ হারাম ভক্ষণ করে, তখন তার গোশত, রক্ত ইত্যাদি হারাম দ্বারাই বেড়ে ওঠে। হারাম খাদ্য গ্রহণকারী যদি কাবা শরিফে গিয়েও মহান আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে কেঁদে কেঁদে দোয়া করে তবু আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন না।