নিশ্চয় এই বিষয়টি অত্যন্ত জ্ঞানপূর্ণ বিষয়সমূহের মধ্য থেকে অন্যতম বড় একটি বিষয়, যার ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের আলেমগণ বিতর্ক বা মতবিরোধ করেছেন; ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. বলেন:
“সালাত বর্জনকারী মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কার হয়ে যাওয়ার মত কাফির; সে তাওবা করে সালাত আদায় করা শুরু না করলে তাকে হত্যা করা হবে।”
আর ইমাম আবূ হানিফা, মালেক ও শাফেয়ী র. বলেন: “সে ফাসিক হবে, কাফির হবে না।”
অতঃপর তাঁরা (তিনজন) তার শাস্তির ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন; ইমাম মালেক ও শাফেয়ী র. বলেন: “তাকে হদ তথা শরী‘য়ত নির্ধারিত শাস্তি হিসেবে হত্যা করা হবে।” আর ইমাম আবূ হানিফা র. বলেন: “তাকে তা‘যীরী তথা শাসনমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে, হত্যা করা হবে না।”
আর এই মাসআলাটি (বিষয়টি) যখন একটি বিরোধপূর্ণ মাসআলা, তখন আবশ্যক হল এটাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর সামনে পেশ করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“আর তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, তার ফয়সালা তো আল্লাহরই কাছে।” – (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১০);
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
“অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ্ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯)।
তাছাড়া মতভেদকারীগণের একজনের কথাকে অপরজনের জন্য দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না; কারণ, তাদের প্রত্যেকেই নিজের মতকে সঠিক মনে করে এবং তাদের একজন মত গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে অপরজনের মতের চেয়ে অধিক উত্তম নয়; ফলে এই ব্যাপারে তাদের মাঝে মীমাংসা করার মত একজন মীমাংসাকারীর দিকে প্রত্যাবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে; আর সেই মীমাংসাকারী হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
আর আমরা যখন এই বিরোধটিকে কুরআন ও সুন্নাহর নিকট উপস্থাপন করব, তখন আমরা দেখতে পাব যে, কুরআন ও সুন্নাহর মত শরী‘য়তের উভয় উৎসই সালাত বর্জনকারী ব্যক্তির কাফির হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা ও প্রমাণ পেশ করে, যা এমন মারাত্মক পর্যায়ের কুফরী, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেয়।
প্রথমত: আল-কুরআন থেকে দলীল-প্রমাণ:
আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবার মধ্যে বলেন:
“অতএব তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” – (সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১);
আর সূরা মারইয়ামের মধ্যে তিনি বলেন:
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা, তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” – (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯ - ৬০)।
সুতরাং সূরা মারইয়াম থেকে (আলোচ্য প্রবন্ধে) উল্লেখিত দ্বিতীয় আয়াত সালাত বর্জনকারীর কুফরী এইভাবে প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা সালাত বিনষ্টকারী ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার অনুসরণকারীদের সম্পর্কে বলেন:
“কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে।” – (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬০);
সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তারা সালাত বিনষ্ট করার সময় এবং মনের কামনা-বাসনার অনুসরণ কালে মুমিন ছিল না।
আর সূরা তাওবা থেকে (আলোচ্য প্রবন্ধে) উল্লেখিত প্রথম আয়াত সালাত বর্জনকারীর কুফরী এইভাবে প্রমাণ করে যে, এতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এবং মুশরিকদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সাব্যস্ত করার জন্য তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন:
১. শির্ক থেকে তাওবা করে ফিরে আসা;
২. সালাত আদায় করা;
৩. যাকাত প্রদান করা।
সুতরাং তারা যদি শির্ক থেকে তাওবা করে, কিন্তু সালাত আদায় না করে এবং যাকাত প্রদান না করে, তাহলে তারা আমাদের ভাই নয়। আর তারা যদি সালাত আদায় করে, কিন্তু যাকাত প্রদান না করে, তবুও তারা আমাদের ভাই নয়।
আর দীনী ভ্রাতৃত্ব তখনই পুরোপুরিভাবে নির্বাসিত হয়, যখন মানুষ দীন থেকে সম্পূর্ণভাবে খারিজ হয়ে যায়। ফাসেকী ও ছোট কুফরীর কারণে দীনী ভ্রাতৃত্ব খতম হতে পারে না।
তুমি কি দেখ না যে, হত্যার প্রসঙ্গে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার বাণ