Islamic News BD - The Lesson of Peace
যুবসমাজের প্রতি ইসলামের আহ্বান
বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১৪:৫৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হচ্ছে যৌবনকাল। এই সময়কালকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত নেয়ামতও বলা চলে। এই সময়ে প্রতিটি মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটে এবং মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও ঘটে। এজন্য এই বয়সে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বুদ্ধিবৃত্তিক হতে হবে। যেন ইসলামবিরোধী কোনো কাজের প্রতি অন্তর আকৃষ্ট না হয়। কেননা যৌবনকালের সদ্ব্যবহার প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।

কেয়ামত দিবসে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে, তার মধ্যে যৌবনকাল অন্যতম। যেমন নবিজি (সা.) বলেছেন,
لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ
অর্থাৎ, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে? সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কী কী আমল করেছে?(তিরমিজি: ২৪১)

এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) যৌবনকালের সদ্ব্যবহার করার জন্য উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের তাগিদ দিয়েছেন। কেননা আল্লাহ মানবজাতিকে প্রেরণ করেছেন তার ইবাদত ও নির্দেশিত পথে চলার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَالۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡن অর্থাৎ, আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সুরা আয-যারিয়াহ: ৫৬)

কিন্তু সমকালীন যুবসমাজের একাংশ ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন গর্হিত কাজে মগ্ন হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে চারিত্রিক অধঃপতন ঘটছে। যা নেহায়েতই দুঃখজনক। অনেকেই এমন কর্মের দ্বারা অজান্তেই ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে পড়ছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم অর্থাৎ, যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১)

শুধু তা-ই নয়, ইসলাম ছাড়া ভিন্নধারার সংস্কৃতি গ্রহণে ও সর্বপ্রকার অশ্লীল কর্মকে আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। এমনকি যুবসমাজের মধ্যে যারা এসব কর্মের প্রচার ও প্রসার করে, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কঠোর হুঁশিয়ারিমূলক আয়াত উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَة فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَهمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَالۡاٰخِرَۃِ ؕ وَاللّٰه یَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ <অর্থাৎ, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সুরা নূর: ১৯)

মুসলিম জাতির সবার প্রতি ইলমে দ্বীন তথা ইসলামি শরীয়তের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যেন সবাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব কাজে বৈধ-অবৈধ নির্ণয় করে চলতে পারে। হারাম তথা অবৈধ কাজে কেউ যেন জড়িয়ে না পড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ অর্থাৎ, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওপর ফরজ। (তারগিব ওয়াত তাহরিব: ৭২)

এমনকি যুবসমাজের অন্তর্ভুক্তরা যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটাবে এবং হারাম কাজ থেকে দূরে থাকবে, তাদের জন্য আছে মহা সুসংবাদ। যা হাদিসে নববি (সা.) দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের দিনে বিভীষিকাময় মুহূর্তে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবে। ওইদিন আল্লাহর আরশের নিচের ছায়া ছাড়া কোথাও ছায়া থাকবে না। সর্বত্র রৌদ্রের কঠোর তাপ বিরাজ করবে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ অর্থাৎ, যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। যথাক্রমে- ন্যায়পরায়ণ শাসক, যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভেতর গড়ে উঠেছে, যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সঙ্গে থাকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের ওপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের ওপর, এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহ্বান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদকা করে যে, তার ডানহাত যা দান করে; বামহাত তা জানতে পারে না, যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। (বুখারি: ১৪২৩)

প্রতিটি মানবের জীবনে যৌবনকাল গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। পাশপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে যে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে বলেছেন, তার মধ্যে যৌবনকাল অন্যতম। কারণ আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতের অর্থাৎ যৌবনকালকে আল্লাহর পথে ব্যয় করা সব মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ অর্থাৎ, পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটির পূর্বে গনিমত জেনে মূল্যায়ন করো: বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে তোমার ধনবত্তাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরকে এবং মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে। (সহিহুল জামে: ১০৭৭)

তবে অশ্লীলতা, বেহায়পনা ও ইসলামি মূল্যবোধ বিরোধী কর্মকাণ্ড যুবসমাজ থেকে দূর করতে হলে সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি নিজের সন্তান, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে ইসলামি শরীয়তের অভিমত অবহিত করতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে সতর্ক করাও সবার কর্তব্য। তবেই দুনিয়াবি জীবনে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, শান্তি ও কল্যাণ লাভ সম্ভব হবে; তেমনি আখেরাতেও মহান রবের মাগফেরাত অর্জন সম্ভব হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
یٰۤاَیُّها الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَاَهلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُها النَّاسُ অর্থাৎ, হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে। (সুরা আত-তাহরিম: ৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনের উপদেশমূলক বক্তব্য অনুযায়ী কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত পথে তথা আল্লাহর পথে জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।