Islamic News BD - The Lesson of Peace
রমজানে ইতেকাফকারীর যত উপকারিতা
বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:০৯ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ইতেকাফ মহান আল্লাহর দরবারে নাছোড় বান্দার মতো লুটিয়ে পড়ে থাকার নাম৷ এমন সুযোগ বছরে একবারই পাওয়া যায়। এভাবে রমজান মাসের শেষ দশকে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করার মাধ্যম ইতেকাফ। ইতেকাফ বান্দার জন্য আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছার এক সেতুবন্ধ। রাব্বুল আলামিনের চূড়ান্ত সান্নিধ্য অর্জনের জন্য নিজেকে তাঁর সমীপে সমর্পণ করার এক সুবর্ণ সুযোগ। সুবর্ণ সুযোগ রবের প্রেমে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার। নিজেকে দরবারে এলাহির দিকে মনোনিবেশ করার।

সত্যিকার অর্থেই ইতেকাফের দ্বারা হৃদয়ে এক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। হৃদয়জুড়ে এক আত্মপ্রশান্তি ও আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর অনুভব হয়। মহান মালিকের সন্তুষ্টির পথে চলার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, প্রতি রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতেকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফে কাটান। (বুখারি : ১৯০৩)

ইতেকাফের যত উপকারিতা

১. শবে কদর পাওয়ার নিশ্চয়তা

শবে কদর প্রাপ্তির নিশ্চয়তাই হলো ইতেকাফের সবচেয়ে বড় উপকারিতা। যেহেতু ইতেকাফকারীরা রমজানের শেষ দশকে মসজিদেই অবস্থান করেন এবং সর্বদা আল্লাহর ধ্যানে নিজেদের মগ্ন রাখেন, নিয়োজিত রাখেন নিজেদের আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে, তাই আশা করা যায়, তারা শবে কদর পেয়ে যাবেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো। (বুখারি ২০১৭)

২. মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি

ইতেকাফকারীরা ধারাবাহিকভাবে দশদিন মসজিদে অবস্থান করেন, স্বভাবতই মসজিদের সঙ্গে তাদের একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয়, ভালোলাগা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। এ সম্পর্ক কেয়ামতের দিন তাদের উপকৃত করবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাত শ্রেণির মানুষ হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা আরশের নিচে ছায়ায় স্থান পাবেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যাদের হৃদয় মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে। (বুখারি : ৩২১৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলবেন, আমার প্রতিবেশী লোকেরা কোথায়? তখন ফেরেশতারা বলবেন, আপনার প্রতিবেশী আবার কারা? আল্লাহ বলবেন, যারা দুনিয়াতে আমার ঘরের (মসজিদ) সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রেখেছে এবং মসজিদ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে। (মুসনাদে আহমদ ১০/২০৩)

৩. গুনাহমুক্ত থাকার সুযোগ

ইবাদতের জন্য সবসময় অনুকূল পরিবেশ হলো মসজিদ, যা গুনাহের কাজের প্রতিকূল পরিবেশ। যেখানে গুনাহ করার কোনো সুযোগই নেই বলে চলে। ফলে সহজেই গুনাহমুক্ত থাকা যায়। কারণ, মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব রয়েছে। পরিবেশ মানুষকে প্রভাবান্বিত করে দারুণভাবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তওবা: আয়াত ১১৯)

৪. আত্মার প্রশান্তি

ইতেকাফকারীরা মসজিদের পরিবেশে থাকার কারণে তাদের হৃদয়ে সত্যিকারের এক প্রশান্তি অর্জন করে। কারণ, তারা আল্লাহ তাআলার স্মরণে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকেন। ফলে তাদের হৃদয়ের উৎকর্ষ সাধন হয় ও প্রশান্তি অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সুরা রাদ: আয়াত ২১)

৫. সময়ের হেফাজত

পৃথিবীতে মানুষ যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অপচয় করে, তা হলো সময়। সময়ের অবমূল্যায়ন হয় সবচেয়ে বেশি। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এমন দুটি নেয়ামত আছে, যাতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসরতা। (বুখারি ৬৪১২) ইতেকাফকারীদের ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত, তারা সময়ের হেফাজত করতে পারেন। সেই সঙ্গে সওয়াব অর্জনে সময় ব্যয় করেন। সময় ব্যয় করেন আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে।

৬. বেশি বেশি নফল ইবাদতের সুযোগ

ইতেকাফের সবচেয়ে বড় একটি উপকার হচ্ছে, অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের সুযোগ পাওয়া যায়। আর নফল ইবাদতের দ্বারাই বান্দা আল্লাহর কাছাকাছি হয়ে যায়। যেমনটি হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেন-

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি,তা দ্বারা কেউ আমার কাছাকাছি হয় না। বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার কাছাকাছি হতে থাকবে। (বুখারি ৬৫০২)

৭. সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া পালন

রমজান মাসের শেষ দশকের ইতেকাফে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া পালন করা হয়। পুরো মহল্লার কজন মানুষ আদায় করলেই সবার দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। তবে যারা ইতেকাফে বসেন, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ সুন্নতটি অন্যের দ্বারা আদায় না করিয়ে সরাসরি নিজেরাই আদায় করলেন।