Islamic News BD - The Lesson of Peace
সাদাকায়ে ফিতর আদায়ের কারণ ও পদ্ধতি
বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৩২ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

রহমত বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের একমাস রোজা পালন শেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে মুমিনদের যে দিনের দাওয়াত দেন, সেই দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এইদিন রোজা রাখা হারাম। আল্লাহ এই দিন প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে দাওয়াত করেন। এটা যেহেতু আল্লাহর তরফ থেকে দাওয়াত, তাই এই দিন ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির সবাই ভেদাভেদ ভুলে খুশিতে মত্ত থাকে, ঘরে ঘরে নানান প্রজাতির সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে। সবাই ফিরনি, পায়েস, লাচ্ছি, খোরমা পোলাও, সন্দেশসহ বাহারি রকমের খাবার খেয়ে থাকে। ধনীদের পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরাও যেনো এই খুশি থেকে বিরত না থাকে, তাই ইসলাম সাদাকাতুল ফিতরের সুযোগ করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی

নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় ৷ (সুরা আলা: আয়াত ১৪)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-

قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাক্বাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। (আবু দাউদ ১৬০৯)

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সাদাকাতুল ফিতর হচ্ছে- وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ ;তুমাতুল্লিলমাসাকিন অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে।

সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য আল্লাহ কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান। সাদাকাতুল ফিতরের আরেক কারণ হচ্ছে রমজান মাসের সিয়াম সাধনায় রোজা পালনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো থেকে মুক্ত হতে ফিতরা আদায় করা জরুরি।

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এটাকে বলা হয়- طُهْرَةً لِلصَّائِمِ ;তুহরাতুল্লিস সায়িম' অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।

ফিতরা আদায়ের পদ্ধতি

ঈদের নামাজ পড়ার আগেই ফিতরা আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে। ফিতরা সম্পর্কিত অনেক বিষয়, তা আদায়ে এসব বিষয়গুলো জানা জরুরি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ عَلَى الصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ وَالْحُرِّ وَالْمَمْلُوكِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সা খেজুর, অথবা অর্ধ সা গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং (ঈদের) নামাজের আগে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি ১৫১২)

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ২ পরিমাপে ৫ জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। আর তাহলো যব, কিসমিস, খেজুর, পনির ও গম। এসব গুলোর মধ্যে গমের পরিমাপ হলো অর্ধ সা আর বাকিগুলোর পরিমাপ এক সা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো একটি দিয়ে এ ফিতরা আদায় করতে পারবেন। (এক সা সমান ৩ কেজি ৩ শ গ্রাম, অর্ধ সা সমান ১ কেজি ৬৫০গ্রাম)

ফিতরা যারা দেবেন

সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবানদের অধীনস্ত পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব ৷

ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের নিসাব তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমমুল্যের নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলেই ওই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব। এ সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো- জাকাতের জন্য এ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে, আর ফিতরার ক্ষেত্রে এক বছর থাকা শর্ত নয়। আর এসব ব্যক্তির জন্য ফিতরা গ্রহণ করাও হারাম।

আবার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) জাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয় ৷ কিন্ত ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র,ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ, ভাড়া বাড়ি, মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) এসবের মূল্যের হিসাবও ফিতরার নেসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সব সামর্থ্যবান মুমিনের ওপর ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। এ সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে যদি কারো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে ওই বাচ্চার জন্যও ফিতরা আদায় করতে হবে।

ফিতরা কখন আদায় করতে হয়

সবচেয়ে উত্তম হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করা। তবে আগে থেকে ফিতরা আদায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর যদি কেউ কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারে তবে ঈদের পরেও তা আদায় করা যাবে। তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতেন। কেননা গরিব-অসহায় এ টাকায় কেনাকাটা করে ধনীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে।আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দিন। মুসলিম উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য করে দিন। ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দ্বীনের ফরজ-ওয়াজিব বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দিন। আমিন।