Islamic News BD - The Lesson of Peace
Rani Amina মুসলিম নারী শাসক বীরত্বের উপমা রানি আমেনা
বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০০:১২ পূর্বাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

ইসলামের ইতিহাসে যেসব নারী তাঁদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও কীর্তির মাধ্যমে নিজেদের নাম চির স্মরণীয় করে রেখেছেন, তাঁদের অন্যতম রানি আমেনা। তিনি আধুনিক নাইজেরিয়ার জাজাউ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। রানি আমিনা তাঁর আজন্ম সাহকিতা, বিচক্ষণ নেতৃত্ব, প্রজাপালন, দানশীলতা ও ইসলাম প্রচারে অনবদ্য ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ৩৪ বছর জাজাউ শাসন করেন। তিনি পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনকালের বহু স্মৃতিস্মারক এখনো টিকে আছে। রানি আমেনা ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে নাইজেরিয়ার জাজাউ (বর্তমান নাম জারিয়া) অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা রানি বাকওয়া তুরুনকু এবং তাঁর বাবা নিকাতাউ উভয়ে শাসক পরিবারের সদস্য ছিলেন। পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁরা দুটি পৃথক অঞ্চল শাসন করেন।

রানি আমেনা ছিলেন আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী হাউসা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। আফ্রিকায় ইসলাম প্রসারে এই সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার এক-চতুর্থাংশ নাগরিক এই গোত্রের সদস্য। হাউসা সম্প্রদায়ের লোকেরা আফ্রিকায় সাতটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যার প্রতিটিই ইসলামের প্রচার-প্রসারে অবদান রাখে। এর মধ্যে জাজাউ ছিল সর্ববৃহৎ। খ্রিস্টীয় ১৬ শতকের শেষভাগে সোংগাই সাম্রাজ্যের পতন হওয়ার পর হাউসারা সাব-সাহারান অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। 

রানি আমেনা শৈশব থেকেই তাঁর পিতার রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে যোগ দিতেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিতা তাঁর সামরিক দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তোলেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে তিনি মেয়েকে উপস্থিত রাখতেন। তিনি তাঁকে ‘গাজিয়া অব জাজাউ’ উপাধি দান করেন। যদিও রানি আমেনার পিতা একজন শান্তিকামী শাসক ছিলেন, তবু তিনি কন্যাকে সামরিক শিক্ষায় দক্ষ করে তোলেন। এ ছাড়া রানি আমেনা একজন মুসলিম নারী হিসেবে ধর্মের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করেন। শাসক হওয়ার আগে ও পরে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রানি আমেনার পিতা ১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তখন ছোট ভাই কারামা জাজাউয়ের শাসক নিযুক্ত হন। ভাইয়ের শাসনামলে আমেনা দক্ষতা ও সাহসিকতার কারণে অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন এবং সেনা নায়ক হিসেবে রাজ্যের সীমানা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১০ বছর শাসনের পর তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হলে তিনি রানি হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং প্রবল বিক্রমের সঙ্গে ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করেন। ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র তিন মাসের মধ্যে রানি আমেনা বিজয় অভিযান শুরু করেন এবং আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত করেন। তিনি একাধিক শহরের গোড়াপত্তন করেন। বিভিন্ন যুদ্ধে ২০ হাজার সেনার নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিজয় অভিযানের মূল লক্ষ্য ভূমি দখল ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন আঞ্চলিক শাসকরা তাঁর আনুগত্য করুক এবং জাজাউয়ের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য পথগুলো নিরাপদ হোক। রানি আমেনার প্রচেষ্টায় জাজাউ অত্র অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। সমগ্র আফ্রিকার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

রানি আমেনা একজন যোদ্ধা ও শাসকের চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন। তিনি একজন প্রকৌশলীও ছিলেন। হাউসা অধ্যুষিত অঞ্চলের শহরগুলোতে এখনো তাঁর নির্মিত নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে। মাটির তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনীগুলো রানি আমেনার বিচক্ষণতারই সাক্ষ্য বহন করে। তিনি যে শহরই বিজয় করতেন বা স্থাপন করতেন তাতে নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণ করতেন। যা শহরবাসীকে চোর-ডাকাতসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করত এবং নাগরিকজীবনে স্বস্তি আনত। আফ্রিকার বাস্তবতায় শহর রক্ষার দেয়ালগুলো জনজীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ ছাড়া লোহার শিরস্ত্রাণসহ একাধিক যুদ্ধাস্ত্র উদ্ভাবনেও তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব রয়েছে। তিনি সমরাস্ত্রশিল্পকে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে উন্নীত করেছিলেন।

১৬১০ খ্রিস্টাব্দে রানি আমেনা একটি সামরিক অভিযানের সময় ঘোড়ার পিঠে শহীদ হন। তবে এখনো নাইজেরিয়ার জনগণ রানি আমেনার উত্তরাধিকার বহন করছে। দেশটিতে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। হাউসা সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের উৎসব আয়োজনে, লোক সাহিত্যে ও গানে গানে রানি আমেনার বীরত্ব ও কৃতিত্ব স্মরণ করে থাকে। তিনি তাদের কাছে বীরত্ব ও সাহসিকতার উপমা।

তথ্যঋণ : আলজাজিরা