আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল বা শরিয়তের বিপক্ষে আলোচনা হয় এমন আলোচনায় বসা, এ রকম আলোচনা শোনা বা তা সম্বলিত বইপত্র পড়া মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَ اِذَا رَاَیۡتَ الَّذِیۡنَ یَخُوۡضُوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ حَتّٰی یَخُوۡضُوۡا فِیۡ حَدِیۡثٍ غَیۡرِهٖ وَ اِمَّا یُنۡسِیَنَّكَ الشَّیۡطٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ الذِّكۡرٰی مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ আর যখন তুমি তাদেরকে দেখ, যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসো না। (সুরা আনআম: ৬৮)
কোরআনের এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চললে অন্তরে কুফরি চিন্তা আসার সমস্যা অনেক কমে যাবে।এরপরও মানুষের মনে অনেক রকম চিন্তা আসে এটা স্বাভাবিক। শয়তান তো ওয়াসওয়াসা দেওয়ার জন্য নিয়োজিত আছেই। আশপাশের বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থা দেখে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলার নির্ধারণ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন অন্তরে আসতে পারে বা অবিশ্বাস উঁকি দিতে পারে।যতক্ষণ আপনি শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে গুরুত্ব না দেবেন, নিজেও সে অনুযায়ী বিশ্বাস করতে না শুরু করবেন, মুখে ওই কুফরি চিন্তা উচ্চারণ না করবেন বা সে অনুযায়ী কাজ না করবেন, ততক্ষণ এ রকম ওয়াসওয়সার কারণে কোনো গুনাহ হবে না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহিহ বুখারি: ২৩৬১)
তাই মনে শয়তানের ওয়াসওয়াসা এলে তা দ্রুত ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই যেন এসব ওয়াসওয়াসা বিশ্বাস বা কাজে প্রভাব ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর কাছে শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় চেয়ে দোয়া করতে হবে। কোনো বিষয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন থাকলে কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেবেন।
অন্তরে কুফরি চিন্তা বা ওয়াসওয়াসা আসলে দুটি দোয়া পড়তে পারেন:
১. অন্তরে কুফরি চিন্তা এলে পড়ুন:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ
উচ্চারণ: আউজুবিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির রাজিম।
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা এলে ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতারনির রাজিম পড়ার নির্দেশ দিয়ে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَ اِمَّا یَنۡزَغَنَّكَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা কখনো তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। (সুরা হা-মিম সিজদাহ: ৩৬)
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, শয়তান তোমাদের অনেকের কাছে এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। (সহিহ বুখারি: ৩২৭ )
২. দ্বীনের ওপর অবিচলতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটি পড়ুন:
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিনলাদুনকা রাহমাহ ইন্নাকা আনতাল-ওয়াহহাব অর্থ: হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)