
দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা, আল্লাহর পরিচয়, ইমান ও ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে জানা মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও আমল। জ্ঞান ছাড়া সঠিক পদ্ধতিতে যথাযথ আমল করা যায় না। যে পরিমাণ ইলম অর্জন না করলে ইমান ঝুঁকির মুখে পড়ে বা কোনো ফরজ-ওয়াজিব ইবাদত সঠিকভাবে করা যায় না, ওই পরিমাণ ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর ফরজ।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। (সুনানে ইবনে মাজা)
মুসলমানদের প্রত্যেকটি এলাকায় কিছু সংখ্যক আলেম বা দ্বীনি জ্ঞানে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করা ব্যক্তি থাকাও জরুরি। যেন সাধারণ মানুষ কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়লে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারে। কোরআনে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কিছু মানুষকে দ্বীনি ইলমে বিশেষজ্ঞতা অর্জনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আর মুমিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা সবাই একসঙ্গে অভিযানে বের হবে। তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যেন তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তাদের কাছে আসবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যেন তারা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (সুরা তাওবা: ১২২)
বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে আলেম বা দ্বীনি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রভূত মর্যাদা ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা অনেক উঁচু করে দেন। (সুরা মুজাদালা: ১১)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা জুমার: ৯)
যে ইলম অর্জন করতে পেরেছে এবং সে অনুযায়ী বিচার-আচার করা ও মানুষকে শেখানোর তওফিক লাভ করেছে, তাকে হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈর্ষার উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
নবিজি (সা.) আরও বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞানে পাণ্ডিত্ব দান করেন। (সহিহ বুখারি) আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য পথ চলে বা সফর করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। (সহিহ মুসলিম)
তবে এই ফজিলত ও সওয়াব লাভ করার জন্য দ্বীনি ইলম অর্জনে সঠিক নিয়ত থাকাও জরুরি। ইলম অর্জন যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইলম অনুযায়ী আমল করার জন্য, তাহলে এই ফজিলত ও সওয়াব পাওয়া যাবে। সম্পদ অর্জন করা, মানুষের কাছে জ্ঞানী হিসেবে সম্মান লাভ করা, সাধারণ মানুষের সামনে বড়াই করা বা আলেমদের সাথে তর্কে বিজয়ী হওয়ার নিয়তে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করলে সওয়াব তো হবেই না বরং শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরী প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া-বিতর্ক করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য (ধর্মীয়) জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। (সুনানে ইবনে মাজা)