ইবাদতের সময় সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার আশায় ইয়াহুদিরা পশ্চিম দিকে আর নাসারারা পূর্ব দিকে মুখ ফেরাতো। তাদের এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা ছিল ভিন্ন। সাওয়াব কিংবা প্রতিদান পাওয়ার আশায় আল্লাহর ভালোবাসা ও আনুগত্য ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরানোয় কোনো সাওয়াব নেই। কিন্তু সাওয়াব কোথায় আর কার জন্যই বা এ পূণ্য; তা কোরআনুল কারিমে একটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। কী সেই দিকনির্দেশনা? কারাই বা পাবেন পূণ্য?
শুধু একটি আয়াতের আমলেই সত্যবাদী-মুত্তাকিরা পাবেন প্রতিদান বা পূণ্য। আর তা ইসলাম বিদ্বেষীদের জন্য নয়। বরং ইবাদত বা সাওয়াবের কাজ হলো এটি-
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য (সাওয়াব বা প্রতিদান) নেই কিন্তু পুণ্য আছে (বিশ্বাসে)- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে, পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে, সব (আসমানি) কিতাব এবং নবিগণকে বিশ্বাস করলে। এবং পূণ্য আছে (দানে) অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে পিতৃহীন ইয়াতিমকে দান করলে, অভাবগ্রস্তকে (মিসকিন) দান করলে, মুসাফিরকে দান করলে, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে দান করলে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে। এবং পূণ্য আছে তাদের- যারা যথাযথভাবে নামাজ পড়ে, জাকাত দেয় ওয়াদা রক্ষা করে অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি পালন করে। এবং যারা ধৈর্যধারণ করে, অভাবে, দুঃখ-কষ্টে, রোগ-বালাই ও সংকট-সংগ্রাম। তারাই হলো সত্যপরায়ণ আর তারাই প্রকৃত ধর্মভীরু। (সুরা আল বাকারা : আয়াত ১৭৭)
কোরআনুল কারিমের আয়াতটি কতই না চমৎকার -
একটি আয়াতে মহান আল্লাহ সত্যবাদী ও মুত্তাকি বান্দার আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি ও গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলো কতই না নিখঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেসব কাজে মহান আল্লাহ পূণ্য বা প্রতিদান রেখেছেন। তাহলো-
সৎ কাজ শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে-
১. ঈমান আনবে অর্থাৎ বিশ্বাস স্থাপন করবে- আল্লাহর উপর;
শেষ দিনের (কেয়ামত) উপর;
ফেরেশতাদের উপর;
(আসমানি) কিতাবের উপর;
নব-রাসুলগণের উপর।
২. আল্লাহকে ভালোবেসে সম্পদ ব্যয় করবে- নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য;
ইয়াতিমের জন্য;
মিসকিনের জন্য;
মুসাফিরের জন্য;
সাহায্য কামনাকারীর জন্য;
মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য।
৩. আর যারা প্রতিষ্ঠা করে- নামাজ প্রতিষ্ঠা করে;
জাকাত দান করে;
ওয়াদা রক্ষা করে;
আর অভাবে দুঃখ-কষ্টে এবং সংকট (রোগ-বালাই), সংগ্রামে (জেহাদে) ধৈর্যধারণ করে।
(আল্লাহর কাছে) এরাই সত্যপরায়ণ; আর তারাই প্রকৃত মুত্তাকি (পরহেজগার)
একটি আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি ও করণীয়গুলো কত সুন্দরভাবেই না উপস্থাপন করেছেন। যা মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আমল বা করণীয়। আর এতে মানুষ হবে সত্যপরায়ণ এবং তাকওয়াবান। আর তারাই আল্লাহর কাছে মুক্তি পাবে। প্রতিদান পাবে। সাওয়াব পাবে। নেকি পেয়ে ধন্য হবে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আয়াতের উপর যথাযথ আমল করা। নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসের প্রতি জোর দেওয়া। আমল-ইবাদতে সতর্ক থাকা এবং দান-সাদকায় যথাযথ স্থানে ব্যয় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ আয়াতের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আয়াতের উপর আমল করে সত্যপরায়ণ ও মুত্তাকি বান্দাদের কাতারে নিজেদের শামিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।