যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

মুমিনের চূড়ান্ত ঠিকানা জান্নাত

জান্নাত মুমিনের চূড়ান্ত ঠিাকানা। আল্লাহর সান্নিধ্য বা দিদারে ধন্য হতেই মুমিন জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাত মুমিনের অতিরিক্ত পুরস্কার। যে ব্যক্তি বা যাদের সঙ্গে মহান আল্লাহর দিদার হবে কিংবা যে মুমিন আল্লাহর সান্নিধ্য পাবে তার জন্য জান্নাত অতিরিক্ত পুরস্কার মাত্র। এ পুরস্কার পাওয়ার ছোট্ট একটি আমল আছে। সে আমলটি কী?

প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলাকে ভয় করাই মুমিনের একটি আমলটি। মুমিন ব্যক্তি যখনই নিজেকে আল্লাহর প্রেমে একাকার করে দিতে পারবে তখনই তার জন্য পরকালের সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। চিরস্থায়ী বসবাসের স্থান জান্নাত হবে সুনিশ্চিত।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। হাদিসের আলোকে কোনো মুমিন বান্দা যদি অল্প কিংবা একটি আমল বা গুণ যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরে তবে তার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। এমনই একটি সহজ আমল বা গুণ হলো মুক্তাকি হওয়া বা আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করা। এ ঘোষণা কোরআনুল কারিমে এভাবে এসেছে-

আর জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে মুত্তাকিদের জন্য, (সেখানে) কোনো দূরত্ব থাকবে না এরই প্রতিশ্রতি দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক (আল্লাহ) অভিমুখী, (তাঁর হুকুমের) হিফাজতকারীর জন্য যারা না দেখে পরম দয়াময়কে ভয় করে এবং (আল্লাহ) অভিমুখী ক্বলবে (অন্তর নিয়ে) উপস্থিত হয় ; (সুরা ক্বাফ : আয়াত ৩১-৩৩)

যারা আল্লাহকে ভয় করে। যে ভয় নিজেদের রাখে পাপমুক্ত। তাদের জন্য জান্নাতকে রাখা হবে খুব কাছে। পরকালের বিচার দিবসে হাশরের ময়দান থেকেই দেখা যাবে এ জান্নাত। তখন জান্নাতের দিকে ইশারা করে বলা হবে, দুনিয়াতে তোমাদেরকে যে জান্নাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, এটিই সেই জান্নাত।

এ আয়াতে মুত্তাকি হওয়ার ৪টি উপায় তুলে ধরা হয়েছে। যার দুটি প্রকাশ্য আর দুটি গোপন। উল্লেখিত প্রকাশ্য গুণ দুটি তখনই সফলতা পাবে, যখন গোপন দুটি গুণের দ্বারা মানুষ নিজেকে তৈরি করে নেবে।

আল্লাহর দিকে খুব বেশি ফিরে আসা। গুনাহ হয়ে গেলেই তাওবা করে ফিরে আসা। অত্যাধিক তাওবা-ইসতেগফার এবং তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকার করা। ঘটে যাওয়া গুনাহের কথা স্মরণ করে নির্জনে আল্লাহর দরবারর মিনতি করে ফিরে আসা।

নিজেকে বিশুদ্ধ রাখা। গুনাহমুক্ত রাখা। কোনো মানুষই জন্মের সময় পাপ বো গুনাহ নিয়ে জম্মায়নি কিংবা অপরাধী হয়ে জন্মায়নি। মানুষ যেভাবে জন্ম নিয়েছে ঠিক সেভাবে নিজেকে সংরক্ষণ করা। আবার এ সংরক্ষণ দ্বারা মহান আল্লাহ বিধানকে সংরক্ষণ করার কথাও বলা হয়েছে। তাই নিজেকে সংরক্ষণ করা কিংবা মহান আল্লাহর বিধানকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন ও গুনাহমুক্ত জীবন গঠন করাই অন্যতম উদ্দেশ্য।

তাই আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য পেতে কোরআনের নির্দেশিত উপায়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা জরুরি। যা মানুষ সকাল-সন্ধ্যাসহ সব সময় পড়তে থাকবে। মানুষ তাতে হয়ে উঠবে মুত্তাকি। মুত্তাকি ব্যক্তিই সব সময় তাওবা-ইসতেগফারে নিজেকে নিয়োজিত রাখে-

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।

২. আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া- أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা। মনে রাখা জরুরি সব সময় আল্লাহকে ভয় করে চলা।

আল্লাহর ভয়ে নিজেকে হাফিজ তথা বিশুদ্ধ রাখা।

আল্লাহর বিধান মেনে চলা।

বেদায়াতমুক্ত হয়ে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।

সকাল-সন্ধ্যা সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া।

ভালোবাসার সঙ্গে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করা এবং

একনিষ্ঠ অন্তর নিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে তার নৈকট্য ও জান্নাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।