যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশেই মিলবে কুরআনের হেদায়েত

কুরআন নাজিলের মাস রমজান। । শুরুতেই রয়েছে ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশের আহ্বান। ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশেই মিলবে কুরআনের হেদায়েত। আবার ইসলামের ওপর অটল ও অবিচল থাকতে দোয়াও পড়া হবে আজ। কী সেই দোয়া?। সুরা বাকারার ২০৪নং আয়াত থেকে সুরা আল-ইমরানের ৯১ আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আজকের তারাবিহর প্রথম দিকে সুরা বাকারায় ইসলামের পরিপূর্ণভাবে প্রবেশের আহ্বান থাকবে আবার সুরা আল-ইমরানে থাকবে হেদায়েতের ওপর অটল অবিচল থাকার প্রার্থনা। আল্লাহর নির্দেশ হলো-


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
‘হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০৮)

 

আবার ইসলামের হেদায়েত পেয়ে এর ওপর অটল ও অবিচল থাকার দোয়া শিখিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন। রোজাদার মুমিন মুসলান এভবে দোয়া পড়বে-
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের পালনকর্তা! সঠিক পথ দেখানোর পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের রহমত (মহাঅনুগ্রহ) দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে কুরআনের বিধান মেনে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

এ নির্দেশনায় 'সিলমুন' এবং 'কাফফাহ' দুটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। জগত বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হাফেজ ইবনে কাছির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি 'সিলমুন'-এর অর্থ করেছেন ‘ইসলাম ও শান্তি’। আর 'কাফ্ফাহ'-এর অর্থ করেছেন ‘পরিপূর্ণরূপে ও সাধারণভাবে’। সেক্ষেত্রে এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়-
‘হে ইমানদারগণ। তোমরা ইসলামে তথা শান্তির জীবন ব্যবস্থায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর। পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করা বলতে আমরা কি বুঝি? কোনো ব্যক্তি যদি নিজ ঘরে প্রবেশ করে তখন সে পুরা শরীর নিয়েই প্রবেশ করে।

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিন-মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যখন শান্তির জীবন ব্যবস্থা ইসলামে প্রবেশ করেছ, তখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চল।এমন যেন না হয় যে, নিজের সুবিধা মতো ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলবে। মন চাইলে মানবে আর না চাইলে মানবে না। এমনটি হলে কি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা হবে?সুতরাং কুরআন নাজিলের মাসে জানতে হবে ইসলাম কী? কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। ইসলাম বিরোধী সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তবে কুরআন নাজিলের মাস রমজান ও রোজা পালন স্বার্থক হবে।মুমিন মুসলমান এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে। তার সন্তুষ্টি অর্জনে দিনরাত ইবাদত-বন্দেগি তথা দিনের সিয়ম (রোজা) রাতের কিয়াম তথা তারাবিহ-তাহাজ্জুদে মগ্ন থাকে। পারস্পরিক লেনদেন, আচার-ব্যবহার, স্বভাব-আচরণ প্রকাশেও থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টা। জীবন পরিচালনায় হাদিসের আমল হবে এমন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আনাস! তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তুমি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে অতিবাহিত করবে, তোমার অন্তরে কারও প্রতি কোনোরূপ বিদ্বেষ থাকবে না। তাহলে তুমি তাই কর। (এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর)। কারণ এমন ধারণা পোষণ করা আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতকে জিন্দা করে সে যেন আমাকেই ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে পরকালে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি)

মনে রাখত হবে
সব মানুষকেই একদিন মরতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর আগে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করে নিজেদের পস্তুতি গ্রহণের যেমন বিকল্প নেই। তেমনি কুরআন নাজিলের মাস রমজানে নিজেদের ইসলামের বিধানে জড়িয়ে নিয়ে তারই কাছে ফিরে যেতে হবে। আর তাতেই মিলবে সফলতা।

আজকের দ্বিতীয় তারাবিহতে আরও যেসব বিধিবিধান ও নির্দেশনা পড়া হবে; তাহলো-

> আয়াত ২০৪-২১৪
ইসলামের সামাজিক অবস্থার চিত্র তথা মুমিনের প্রকৃত পরিচয়, ইয়াহুদি জাতির ধ্বংসের কারণ এবং মুশরিকদের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বর্ণনা রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধের মূলনীতি ঘোষণাপূর্বক জান্নাত পাওয়ার মিথ্যার আশ্বাসে লোভ-লালসা ও বিভ্রান্তিমূলক বর্ণনার বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে।

> আয়াত ২১৫-২২০
দান-সাদকার অগ্রাধিকারভুক্ত খাতের উল্লেখ, ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব, আল্লাহর মাসসমূহের মধ্যে সম্মানিত মাসের বিধান ও তাৎপর্যের বর্ণনা রয়েছে। মদ-জুয়া নিষিদ্ধে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা এবং দান-সাদকার পরিমাণ ও মাত্রা এবং ইয়াতিমের সম্পদ ব্যয় নির্বাহ ও অধিকার সংরক্ষণের বিবরণ রয়েছে।

> আয়াত ২২১-২৪২
মানুষের পারিবারিক জীবনের নীতিমালায় ইসলামে বিবাহের বিধান, যৌন জীবন, বিধর্মী ও মুশরিক নারী পুরুষকে বিবাহের বিধান, মহিলাদের ঋতুস্রাবের বিধান, শপথ সংক্রান্ত সতর্কতার বিধান ওঠে এসেছে।

স্বামী-স্ত্রীর ইলা’র বিধান, তালাকের বিধান ও মোহর, তালাক পরবর্তী হিল্লা বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় ওঠে এসেছে।

সন্তানদের স্তন্যদানের বিষয়, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতকাল এবং বিধবার প্রতি ইসলামের উদারতা ও তাদের অধিকার সংরক্ষণে ইসলামি নীতি আলোচিত হয়েছে।

> আয়াত ২৪৩-২৫৮
ইয়াহুদিদের চরম হঠকারিতা, আল্লাহর পথে জিহাদ ও তার নেতৃত্বের সুফল, জালেমকে দিয়ে জালেমদের দমনের বিষয়টি ওঠে এসেছে। রিসালাত ও নবুয়ত প্রসঙ্গে নবীগণের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদার তারতম্য এবং কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ মধ্যে মহান আল্লাহ তাআলা অনেকগুলো গুণের আলোচনা এসেছে। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণে তাগুত বর্জন ঈমানের পূর্বশর্ত ও ব্যক্তি স্বাধীনতার আলোচনা রয়েছে।

> আয়াত ২৫৯-২৮৬
সর্বোপরি এ সুরায় সুদের মতো মারাত্মক ব্যাধির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। ব্যবসা ও সুদের নীতিগত পার্থক্য, সুদের অর্থনৈতিক ক্ষতি, সুদের শাস্তি ঘোষিত হয়েছে।

সুরার শেষাংশে লেনদেন ও চুক্তি সংক্রান্ত বিধিবিধানের পাশাপাশি ইসলামের সাক্ষ্য আইন, মেয়াদি ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং বন্ধকীঋণ সংক্রান্ত নীতিমালার বিবরণ রয়েছে। আরও রয়েছে ঈমানের সঠিক রূপ-রেখার আলোচনা।

সুরা আল-ইমরান
সুরা আল-ইমরান মাদানি সুরা। এ সুরার সব আয়াতই হিজরতের পর বিভিন্ন সময়ে নাজিল হয়। ২০ রুকুর এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২০০। এ সুরায় দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি হলো আহলে কিতাব আর দ্বিতীয় দলটি হলো যারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ঈমান গ্রহণ করেছিলেন।

> আয়াত ১-৩২
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা তাওহিদের বিষয়ে অতিতের আসমানী কিতাবের রেফারেন্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন।

পৌত্তলিকতা, খ্রিস্টবাদ ও আল্লাহর একত্ববাদের আলোচনা, তাওরাত ও ইঞ্জিলের ঐতিহাসিক পটভূমি, সব রিসালাতের উৎসের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

কুরআনে মুহকামাত ও মুতাশাবিহাত আয়াতের আলোচনাও রয়েছে। মুমিনের গুণাবলী ও তাঁদের প্রতি আল্লাহর সাহায্যের পাশাপাশি ইসলামের সামগ্রিক আলোচনা ও আমল ধ্বংস হওয়ার কারণ এবং বিধর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ব্যাপারে নসিহত এবং আল্লাহ তাআলার সার্বভৌম ক্ষমতার বিষয় ওঠে এসেছে।

> আয়াত ৩২-৬৪
পূর্ববর্তী নবি রাসুলসহ অনেক মহীয়সী ব্যক্তিত্বের জীবনাচরণ ইবাদত-বন্দেগি ও মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা রয়েছে এ আয়াতগুলোতে। বিবি মরিয়ম ও হজরত ইসা আলাইহিস সালামের জন্ম, প্রেক্ষাপট, মুযিজা, নবুয়তি মিশন এবং ইসা আলাইহিস সালামকে হত্যায় ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত ও মুবাহালার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

> আয়াত ৬৫-৯১
মুসলিম জাতির ঐক্য এবং মুসলমানদের ছদ্মাবরণে ইয়াহুদি ও ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রসহ নৈতিকতার প্রশ্নে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের অবস্থান বিষয়ক আলোচনা রয়েছে।

শেষের আয়াতগুলোর দিকে আল্লাহর সঙ্গে নবিদের ওয়াদা এবং আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতাকারী মুরতাদের তাওবা প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খতম তারাবিহ নামাজে আদায় করা কুরআনের আজকের অংশ বুঝে পড়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন অনুযায়ী আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। হৃদয়ে কুরআনের নূর সৃষ্টি করে দিন। আমিন।