কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

বিনয় ও মহানুভবতার অনন্য দৃষ্টান্ত

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনয় ও মহানুভবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। চরম বিপদেও তার মাঝে ফুটে ওঠতো বিনয় ও মহানুভবতা। কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বিনয়ী হতে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাঁর মহানুভবতা ও বিনয়ে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। বিশ্ব মানবতার জন্য তার বিনয়, মহানুভবতা ও অনুকরণীয় আদর্শের সেসব অনন্য দৃষ্টান্ত কী?

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আচার-আচরণ ও বিনয়-নম্রতার তুলনাহীন সম্রাট। কোরআনুল কারিমে তার বিনয় ও নম্রতার আচরণ ফুটে ওঠেছে এভাবে-

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ ۪ আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলেন। যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেনতবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়তো।(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিচিত-অপরিচিত সব মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন। সমাজের অসহায় ও নিম্নশ্রেণির সবার কাছে তিনি ছিলেন একান্ত আপন। যে কেউ যে কোনো সময় তার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। হাদিসে পাকে তার বিনয় ও মহানুভবতার বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে-

أَجْوَدُ النَّاسِ صَدْرًا، وَأَصْدَقُ النَّاسِ لَهْجَةً، وَأَلْيَنُهُمْ عَرِيكَةً، وَأَكْرَمُهُمْ عِشْرَةً، مَنْ رَآهُ بَدِيهَةً هَابَهُ، وَمَنْ خَالَطَهُ مَعْرِفَةً أَحَبَّهُ.

এ কারণেই বিশ্বনবি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ চারিত্রিক পবিত্রতার অধিকারী। যার ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা ছিল এমন-

وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। (সুরা কলাম : আয়াত ৪) বিশ্বনবির বিনয় ও মহানুভবতার দৃষ্টান্ত

মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিনয় ও মহানুভবতা কত উঁচু মানের ছিল তা একটি ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। যেখানে তিনি ছিলেন বিনয়ী আবার সাহাবায়ে কেরামকেও বিনয় ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছেন। ঘটনাটি ছিল এমন-

যায়েদ ইবনে সানাহ। একজন ইয়াহুদি ধর্মজাযক ছিলেন। একবার প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে নির্ধারিত সময়ের জন্য কিছু ধার নিয়েছিলেন। ধার পরিশোধের সময় তিনদিন বাকি থাকতেই সেই ইয়াহুদি যায়েদ ইবনে সানাহ বিশ্বনবির কাপড় গুটিয়ে ধরে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সময় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছিলেন।

ইয়াহুদি যায়েদ ইবনে সানাহ কর্কশ কণ্ঠে বজ্রধ্বনিতে বলে ওঠে- তোমরা বনি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর; ঋণ পরিশোধে বড়ই টালবাহানা করছো!

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো বীর-বাহাদুরের সামনে প্রিয় নবির সঙ্গে ইয়াহুদির এমন আচরণ তিনি সহ্য করতে পারেননি! রাগে গর্জে উঠেন তিনি। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাগ ও গর্জন দেখে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন। পরক্ষণেই তিনি কোমলকন্ঠে বললেন-

হে ওমর! এ মানুষটি (ইয়াহুদি) তোমার কাছে উত্তম আচরণ পাওয়ার যোগ্য ছিল। কেননা আমি এবং সে দুজনই তোমার কাছে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী ছিলাম। তাহলো এই যে-তুমি আমাকে সুন্দরভাবে ঋণ পরিশোধ করতে বলবে। আর তাকে (ইয়াহুদিকে) সুন্দরভাবে তার পাওনা তলব করতে বলবে।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেওয়া এমন উপদেশই প্রমাণ করে যে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত বিনয়ী ও মহানুভবতার অধিকারী ছিলেন। আবার তাকে বিনয় ও মহানুভবতার পরিচয় কত সুন্দরভাবেই না দেখিয়ে দিলেন!

সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর শিক্ষা! একজন সাহাবির কাছে নিজের জন্য সদুপদেশ চাওয়ার যেমন আকাঙ্ক্ষা করলেন আবার পাওনাদারকে ঋণ তলবের দীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলেন। কত বড় বিনয়ী ছিলেন বিশ্বনবি!

পরক্ষণেই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানালেন, আসলে ঋণ পরিশোধের সময় এখনও তিনদিন বাকি। তারপরও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রিয় নবি বললেন-

তার পাওনা পরিশোধ করে দাও এবং বাকি এ তিন দিনের হিসেবে তাকে আরও ৩০ সা পরিমাণ বাড়িয়ে দাও।উল্লেখিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম কোনো আত্মরক্ষামূলক মনোভাব দেখাননি। বিষয়টিকে ব্যক্তিগত ইস্যুতে পরিণত করেননি। এখানেও তিনি তুলে ধরেছেন ইসলামের সুমহান আদর্শ ও সৌন্দর্য। যে আদর্শ ও সৌন্দর্য দেখে ইয়াহুদি জায়েদ ইবনে সানাহ ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ মহানুভবতা ইয়াহুদির মনে দাগ কাটলো। ইয়াহুদি বুঝতে পারলো, তার আচরণটাই অন্যায় হয়েছে। কেননা সে চাইলেই সময়ের আগেই পাওনা চাইতে পারে না। আর তার পাওনা চাওয়ার ধরণ এবং আচরণও খুব খারাপ ছিল। এ আচরণ ও মন্তব্যের পর প্রিয় নবি তাকে কিছু না বলে উল্টো উত্তম আচরণ এবং পাওনা পরিশোধে আরও বাড়িয়ে দিতে বললেন। এতে তার চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হলো। সে বললো- এমন ভালো মানুষও কি হয়!

বিশ্বনবির মহানুভবতায় ইয়াহুদির ইসলাম গ্রহণ

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ অনুপম আচরণে বদলে গেল ইয়াহুদি যায়েদ ইবনে সানাহ-এর মন। অন্ধকার ছেড়ে সে পেল- আলোকিত জীবন ও আলোকিত ভুবনের সন্ধান। নবীজীর ক্ষমা ও মহানুভবতা দেখে ইসলাম গ্রহণ করে চিরজীবনের জন্য তিনি ধন্য হলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)

এটি ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতা ও পবিত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যে বিনয় ও চারিত্রিক গুণে মুহূর্তেই ইয়াহুদি যায়েদ ইবনে সানাহ হলেন- হজরত যায়েদ ইবনে সানাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিনয় ও মহানুভবতার পরিচয় দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।