যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রোগীকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত ও মর্যাদা

সুস্থতা-অসুস্থতা ও রোগ-ব্যাধি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। এটি কারো জন্য শাস্তি, কারো জন্য পরীক্ষা আবার কারো জন্য গুনাহ মাফের উপায় ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। এসব আলোচনাই এসেছে কোরআন-সুন্নায়। আবার রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার এবং তার সেবা করায়ও রয়েছে অফুরন্ত ফজিলত, সওয়াব ও মর্যাদা। রোগ-ব্যাধি, সুস্থতা ও রোগীকে দেখতে যাওয়া সম্পর্কে ইসলামের সেসব নির্দেশনা কী?

রোগ-ব্যাধি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। আবার তিনিই মানুষকে সুস্থতা দান করেন। মহান আল্লাহ কোরআনে পাকে দুইটি বিষয়ই সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষকে পরীক্ষা করতে মহান রবের ঘোষণা এমন-

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-প্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান বা ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা কররো; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৫)

আবার আল্লাহ তাআলার একান্ত অনুগত বান্দারা রোগ-ব্যধি এবং মুসিবতের পরও মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের সঁপে দেয় আর বলে-

الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ যারা তাদের উপর কোনো বিপদ এলে বলে- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৬)

اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ

;(বিপদে ধৈর্যধারণকারী) এই সব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই হল সুপথগামী।(সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৭)

যেমনিভাবে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম চরম বিপদে, সৎপথ প্রাপ্তিতে এবং রোগ-ব্যাধিতে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পন করেছিলেন-

الَّذِیۡ خَلَقَنِیۡ فَهُوَ یَهۡدِیۡنِ

‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সুরা শুআরা : আয়াত ৭৮)

وَ الَّذِیۡ هُوَ یُطۡعِمُنِیۡ وَ یَسۡقِیۡنِ

তিনিই আমাকে খাওয়ান এবং তিনিই আমাকে পান করান।(সুরা শুআরা : আয়াত ৭৯)

وَ اِذَا مَرِضۡتُ فَهُوَ یَشۡفِیۡنِ এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। (সুরা শুআরা : আয়াত ৮০)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীর সেবা-যত্ন করাকে এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের হক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের ৬টি হক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- কোনো মুসলমান যখন অসুস্থ হয়ে যাবে তখন তার সেবা করা। (মুসলিম)

আবার রোগীর সেবা ও রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত, সওয়াব ও বিশেষ মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তাহলো-

১. হজরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কোনো মুসলমান যখন তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়<তখন সে ফিরে আসা (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (মুসলিম মিশকাত)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, খুরফাতুল জান্নাত কী? তিনি বললেন, এটা হচ্ছে জান্নাতের কুড়ানো ফল। (মুসলিম)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যায় তখন একজন ফেরেশতা উচ্চস্বরে আকাশ থেকে ঘোষণা করে বলেন- তুমি ভালো থাক তোমার চলাফেরা ভালো ছিল তুমি বেহেশতে ঠিকানা করে নিয়েছ।তিরমিজি)

৩. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া প্রিয় নবির নির্দেশ ও আদর্শ। তিনি নিজে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন এবং দেখতে যাওয়ার জন্য বলতেন। কারণ অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে সে প্রশান্তি পায়, দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। মানসিকভাবে প্রফুল্লতা অনুভব করে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন-তোমরা অসুস্থদের দেখতে যাও এবং আবার কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করো কেননা তা পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।(মুসনাদে আহমদ)

৪. কোনো রোগীকে দেখতে গেলে গুনাহ মাফ হয়। রোগীকে দেখতে গেলে বা সেবাযত্ন করলে ফেরেশতার তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছি যে ব্যক্তি সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যে সন্ধ্যায় রোগী দেখতে যায় তার জন্য সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। আর জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর সেবা করা। রোগীকে দেখতে যাওয়া। রোগীকে দেখে নিজের পরকালের মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত, সওয়াব ও মর্যাদা অর্জনের চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।