যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রমজানের পরও যেসব আমল চালু থাকা জরুরি

আলহামদুলিল্লাহ! সুন্দরভাবেই ৩০ রোজা পূর্ণ হলো। আর সন্ধ্যায় ইফতারের মাধ্যমে রমজান শেষ হলেও একজন মুমিন তার ইবাদতে কখনোই পিছিয়ে থাকবেন না। রমজান মাসের আমল ও অভ্যাসগুলো বছরজুড়ে ধরে রাখবেন। রমজানের রোজা রেখে যে আমলগুলো করেছেন তা সারা বছর জীবিত রাখবেন। আর তাতেই মিলবে অফুরন্ত রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত। আমলগুলো কী?

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। নির্ধারিত সময় মানুষ দুনিয়াতে অবস্থান করবে। এ সময়টি পরকালের শস্যক্ষেত্র। যারা এখানে ভালো কাজ করবে; তারাই ভালো ফল পাবে। আর যারা মন্দ কাজ করতে তারাও এর প্রতিফল পাবে।

মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে মহান আল্লাহ প্রতি সপ্তাহে কিছু নির্ধারিত মর্যাদার দিন রেখেছেন আবার মাসে নির্ধারিত কিছুদিন রেখেছেন আবার বছরের বিভিন্ন সময়ে রেখেছেন বিশেষ কিছু নির্ধারিত দিনও সময়। এর মধ্যে রমজান মাসও একটি। এ মাসের আমলগুলো নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে পারলে বছরজুড়ে পাওয়া যাবে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত।

রমজানের এই দিনগুলোতে মানুষ অনেক নেক কাজ করেছেন। সেগুলোকে নিজেদের জীবনে স্থায়ী রূপ দান করতে হবে। যদি এমনটি করা যায়, তবে এই রমজান আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম কারণও হবে। কেননা হাদিসে পাকে এ প্রসঙ্গেই সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয়,যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসলিম)

সুতরাং প্রতি সপ্তাহ, মাস ও বছরের আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলা খুবই জরুরি। এ ছাড়া মানুষের মৃত্যুর পর যেন সওয়াবের পথ বন্ধ হয়ে না যায়; সে জন্য বিশেষ ৩টি আমল অব্যাহত রাখা। এ জন্য সপ্তাহ, মাস ও বছর হিসাব করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই বিশেষ ৩টি আমল করা জরুরি। হাদিসে এসেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি আমল ছাড়া সব রকমের আমলই বন্ধ হয়ে যায়।তাহলো-

১. সাদকায়ে জারিয়া,

২. উপকারি ইলম বা জ্ঞান,

৩. এমন নেক সন্তান, যে তাঁর (মৃত্যুর পর তার) জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম)

সদকায়ে জারিয়া

যার অর্থ এমন ধরনের জনকল্যাণকর কাজ ব্যয় হয়, যার সুফল বহু দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। মানুষ এ কাজে উপকার পেয়ে থাকে। যেমন- পুকুর কাটা, কুপ খনন করা বা পরিস্কার পানির ব্যবস্থা করা, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা তৈরি করা, রাস্তার পাশে ছায়াদানকারী বৃক্ষ রোপন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করে যাওয়া, রাস্তাঘাট নির্মাণ বা ব্রিজ-কালর্ভাট তৈরি করা

উপকারি জ্ঞান

এমন জ্ঞানমূলক বই-পুস্তক লেখা, যার মাধ্যমে লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করবে। কল্যাণের পথে পরিচালিত হবে। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় জ্ঞান লাভে জীবন সাজাতে পারবে। কিংবা মৃতব্যক্তি কাউকে এমন কিছু শেখায় যে তার ফলেও সে প্রতিদান পেতে থাকবে।

নেক সন্তান

তৃতীয় যে কাজটির জন্য মৃত্যুর পরও সে প্রতিদান পেতে থাকবে তা হল তার নেক সন্তান। যাকে সে প্রথম থেকেই সুশিক্ষা প্রদান করেছে এবং তার চেষ্টার ফলেই সে আল্লাহভীরু ও দ্বীনদার হতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত এমন নেক সন্তান দুনিয়ায় জীবিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত তার কৃত সৎকাজের ছওয়াব সেও পেতে থাকবে। এমনকি সে সন্তান বাবা-মার কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে বলবে-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا উচ্চারণ : রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

অর্থ : হে আমার প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।

সুতরাং আমাদের রমজানের আমলগুলো যেন এমন হয় যে, রমজান পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে জীবন পরিচালনায় সহায়ক হয়। এমনকি মৃত্যুর পরও যেন তা আমাদের জন্য সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়।

বছরজুড়ে এ কাজগুলোও করা যেতে পারে-

১. নিয়মিত বাবা-মায়ের সেবা করা।

২. প্রতিবেশির খোঁজ-খবর নেওয়া।

৩. অসহায় মানুষের ঘরে ঈদ উপহার ও পরবর্তী সময় খাদ্য-সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।

৪. বিপদ-আপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানো।

৫. অহংকার-দম্ভ পরিহার করা।

৬. পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা।

৭. লেন-দেনে সততা অবলম্বন করা।

৮. অন্যের সম্পদ দখল করা থেকে বিরত থাকা।

৯. কখনো মিথ্যা কথা না বলা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান মাস চলে যাওয়ার পরও এ আমলগুলোর মাধ্যমে বছরজুড়ে রমজানের আবহ চালু রাখার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।