যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

মুসলিমদের মনোবল বাড়াতে আল্লাহর ঘোষণা

ইসলামের সূচনালগ্নে মদিনায় মুসলিমদের সংখ্যা যখন হাতে গোনা; সে সময় মুসলিমদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে মহান আল্লাহ অনেক সুসংবাদ দিয়েছেন। ইসলাম বিদ্বেষীদের সঙ্গে সংঘটিত যুদ্ধে প্রথমে একহাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার ঘোষণা দেন। এরপর তিন হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার ঘোষণা দেন। মুসলিমদের মনোবল আরও চাঙ্গা রাখতে শেষে আবার ৫ হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার ঘোষণা দেন। এসব ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল মুমিন মুসলমান যেন কাফের মুশরিকরদের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় হতাশ হয়ে না পড়ে। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন এভাবে-

اِذۡ تَقُوۡلُ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَلَنۡ یَّکۡفِیَکُمۡ اَنۡ یُّمِدَّکُمۡ رَبُّکُمۡ بِثَلٰثَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ مُنۡزَلِیۡنَ

بَلٰۤی ۙ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا وَ یَاۡتُوۡکُمۡ مِّنۡ فَوۡرِهِمۡ هٰذَا یُمۡدِدۡکُمۡ رَبُّکُمۡ بِخَمۡسَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ مُسَوِّمِیۡنَ

অবশ্যই, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং সাবধান হয়ে চল, তাহলে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে তোমাদের প্রভু পাঁচ হাজার (বিশেষরূপে) চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৫)

وَ مَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشۡرٰی لَکُمۡ وَ لِتَطۡمَئِنَّ قُلُوۡبُکُمۡ بِهٖ ؕ وَ مَا النَّصۡرُ اِلَّا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَکِیۡمِ আর এ (সাহায্যকে) তো আল্লাহ তোমাদের জন্য সুসংবাদ করেছেন যাতে তোমাদের মন শান্তি পায় এবং সাহায্য শুধু পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৬)

لِیَقۡطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡ یَکۡبِتَهُمۡ فَیَنۡقَلِبُوۡا خَآئِبِیۡنَ

এই জন্য যে, তিনি অবিশ্বাসীদের এক অংশকে নিশ্চিহ্ন অথবা লাঞ্ছিত করেন; ফলে তারা অকৃতকার্য হয়ে ফিরে যায়। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৭)

لَیۡسَ لَکَ مِنَ الۡاَمۡرِ شَیۡءٌ اَوۡ یَتُوۡبَ عَلَیۡهِمۡ اَوۡ یُعَذِّبَهُمۡ فَاِنَّهُمۡ ظٰلِمُوۡنَ

وَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ یَغۡفِرُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یُعَذِّبُ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সব কিছুই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৯)

আয়াতের প্রসঙ্গিক আলোচনা

ইসলামের সূচনালগ্নে মদিনায় নতুন রাষ্ট্র গঠনে পর বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে যুদ্ধে মহান আল্লাহ মুসলিমদের শুধু বিজয় দান করেননি বরং যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য মুসলিমদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে একহাজার ফেরেশতা দ্বারা সহযোগিতা করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

মুশরিকরা বদর যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর এ যুদ্ধে প্রতিশোধে তারা পুনরায় পরের বছর আবারও মদিনার নতুন ইসলামি রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করতে উহুদ প্রান্তরে তাবু স্থাপন করেন। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মনোবল চাঙ্গায় মহান আল্লাহ দুই বার ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করার ঘোষণা দেন। এ আয়াতগুলোতে সে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

اِذۡ تَقُوۡلُ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَلَنۡ یَّکۡفِیَکُمۡ اَنۡ یُّمِدَّکُمۡ رَبُّکُمۡ بِثَلٰثَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ مُنۡزَلِیۡنَ স্মরণ কর যখন তুমি বিশ্বাসিগণকে বলেছিলে যদি তোমাদের প্রভু তিন হাজার প্রেরিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কি তোমাদের জন্য তা যথেষ্ট হবে না(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৪)

এ আয়াতের আলোচনায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে যে, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের প্রভূত শক্তি দান করেছেন। একজন ফেরেশতা একাই গোটা জনপদ উল্টে দিতে পারেন। কওমে লুতের জনপদ হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম একাই উল্টে দিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় এখানে ফেরেশতাদের বাহিনী প্রেরণ করার কি প্রয়োজন ছিল?

এছাড়া ফেরেশতারা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে অবতরণই করেছিল, তখন একটি কাফেরেরও প্রাণ নিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল না। এ সব প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। অর্থাৎ ফেরেশতা প্রেরণের উদ্দেশ্য তাদের দ্বারা যুদ্ধ জয় করানো ছিল না; বরং উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বাহিনীকে সান্তনা প্রদান করা, তাদের মনোবল দৃঢ় করা এবং বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া।

কোনো না কোনো উপায়ে মুসলিমদের সামনে একথা ফুটিয়ে তোলা যে, আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের সাহায্যার্থে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যেমন- কখনো দৃষ্টির সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করে, কখনো আওয়াজ দিয়ে এবং কখনো অন্য কোনো উপায়ে। বদরের রণক্ষেত্রে এসব উপায়ই ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো কোনো সাহাবি জিবরিলের আওয়াজ শুনেছেন যে, তিনি কাউকে ডাকছেন। কেউ কেউ কতক ফেরেশতাকে দেখেছেনও। কোনো কোনো সাহাবি কোনো কোনো কাফেরকে ফেরেশতাদের হাতে মরতেও দেখেছেন। (মুসলিম)

উপরোক্ত ঘটনাবলী এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে ফেরেশতাগণ মুসলিমদের আশ্বস্ত করছিলেন যে, তারাও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের কাজ ছিল মুসলিমদের মনোবল অটুট রাখা এবং সান্ত্বনা দেয়া। পুরো যুদ্ধটাই ফেরেশতাদের দ্বারা করানো উদ্দেশ্য ছিল না।

এর আরও একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ এই যে, এ জগতে জেহাদের দায়িত্ব মানুষের কাঁধেই অর্পণ করা হয়েছে। সে কারণেই তারা এর সওয়াব, ফজিলত ও উচ্চমর্যাদা পাবে। ফেরেশতা-বাহিনী দ্বারা দেশ জয় করা যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো, তাহলে পৃথিবীতে কাফেরদের রাষ্ট্র দুরের কথা, তাদের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যেত না। এ বিশ্ব চরাচরে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা তা নয়। এখানে কুফর, ঈমান, ইবাদাত ও গুনাহ মিশ্রিতভাবেই চলতে থাকবে। এদের পরিস্কার পৃথকীকরণের জন্যে হাশরের দিন তো নির্ধারিতই রয়েছে। (মাআরেফুল কোরআন)

بَلٰۤی ۙ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا وَ یَاۡتُوۡکُمۡ مِّنۡ فَوۡرِهِمۡ هٰذَا یُمۡدِدۡکُمۡ رَبُّکُمۡ بِخَمۡسَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ مُسَوِّمِیۡنَ অবশ্যই যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং সাবধান হয়ে চল, তাহলে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে তোমাদের প্রভু পাঁচ হাজার (বিশেষরূপে) চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১২৫)

বদরের যুদ্ধে ফেরেশতা প্রেরণের ওয়াদা প্রসঙ্গে ফেরেশতাদের সংখ্যা বিভিন্ন সুরায় বিভিন্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা আল-আনফালের আয়াতে এক হাজার, সুরা আলে-ইমরানের আয়াতে প্রথমে তিন হাজার এবং পরে পাঁচ হাজার ফেরেশতা প্রেরণের ওয়াদা করা হয়েছে। এর রহস্য কি?

উত্তর এই যে, সুরা আল-আনফালে বলা হয়েছে, বদর যুদ্ধে মুসলিমগণ- যাদের সংখ্যা ছিল তিনশত তের জন আর শক্ৰ সংখ্যা এক হাজার- আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এতে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার ওয়াদা করা হয়। অর্থাৎ শক্র সংখ্যা যত, তত সংখ্যক ফেরেশতা প্রেরণ করা হবে।

আয়াতে বলা হয়েছে, যখন তোমরা স্বীয় রবের সাহায্য প্রার্থনা করছিলে, তখন তিনি তোমাদের জবাব দেন যে, আমি এক হাজার অনুসরণকারী ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবো। এ আয়াতের পরও ফেরেশতা প্রেরণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে মুসলিমদের মনোবল অটুট রাখা এবং বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করা।