যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

নেক আমল শান্তিময় জীবন দান করে

যে আমলকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন; কথা কিংবা কাজ যা-ই হোক, তাকেই সৎ আমল বলা হয়। এই সৎ আমলের পরকালীন ফায়দা অনেক রয়েছে, দুনিয়াতেও সৎ আমলের নগদ কিছু ফায়দা রয়েছে। যারা ভালো আমল করবে তাদের আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

এক. দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র জীবন দান করবেন।

পৃথিবীর সব ধর্মের মানুষ শান্তি চায়। সবার কাম্য শান্তি। যে ব্যক্তি সৎ আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে শান্তিময় জীবন দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন-যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উত্কৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব। (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসিরের মতে এখানে হায়াতে তাইয়্যেবা বলতে দুনিয়ার পবিত্র ও আনন্দময় জীবন বোঝানো হয়েছে। এর বিপরীতে যারা আল্লাহর পথে চলবে না তাদের জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন। আল্লাহ বলেন, আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন একত্র করব অন্ধ অবস্থায়। (সুরা তহা, আয়াত : ১২৪)

দুই. পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করবেন। অনেক ধন সম্পদ জায়গা-জমি ঘরবাড়ি দিয়ে আপনার পরিবার পরিজনকে হেফাজত করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রাচীরের ব্যাপার সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াবশত ইচ্ছা করলেন যে তারা যৌবনে পদার্পণ করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। (সুরা কাহাফ, আয়াত : ৮২)

আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে যে খাজির (আ.)-এর মাধ্যমে এতিম বালকদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধনের হেফাজত এ জন্য করানো হয় যে তাদের পিতা একজন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাই আল্লাহ তাআলা তার সন্তান-সন্ততির উপকারার্থে এ ব্যবস্থা করেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

তিন. আকস্মিক কোনো বিপদাপদ থেকে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করবেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে তিন ব্যক্তির কথা আলোচনায় এসেছে। তিন ব্যক্তি পাহাড়ের মাঝে প্রবল বৃষ্টির সময় গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে। হঠাৎ গুহার মুখে একটি বড় পাথর গড়িয়ে মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের তিনজনই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তিনজনেই আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের একান্ত সৎ আমল দিয়ে দোয়া করে। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়ার বিনিময় তিন ভাগে সেই পাথরের অংশকে সরিয়ে দেন। প্রথম ব্যক্তি, তার মা-বাবার সঙ্গে সৎ আমল দিয়ে দোয়া করেছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি, তার এক চাচাতো বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর থেকে আল্লাহর ভয়ে বিরত থেকেছে, সেই অসিলায় দোয়া করেছেন। তৃতীয় ব্যক্তি, যে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করেছেন। এর অসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের এই দোয়ার অসিলায় এই বিপত্সংকুল সময়ে তাদের উদ্ধার করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ২২১৫)

চার. অদৃশ্যভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তরে তার জন্য ভালোবাসা দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে দয়াময় অবশ্যই তাদের জন্য সৃষ্টি করেন ভালোবাসা। (সুরা মরিয়ম, আয়াত : ৯৭)

পাঁচ. আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং নৈকট্য দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই। বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

ছয়. ভূপৃষ্ঠের মাঝেই আল্লাহ তাআলা তাকে নেতৃত্ব দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি অবশ্যই তাদের পৃথিবীতে নিজ খলিফা বানাবেন, যেমন খলিফা বানিয়েছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তাদের জন্য তিনি সেই দ্বিনকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দান করবেন, যে দ্বিনকে তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তারা যে ভয়-ভীতির মধ্যে আছে, তার পরিবর্তে তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে। আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। এর পরও যারা অকৃতজ্ঞতা করবে, তারাই অবাধ্য সাব্যস্ত হবে। (সুরা নুর, আয়াত : ৫৫)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তিনটি বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছেন। আপনার উম্মতকে জমিনের বুকে খলিফা ও শাসনকর্তা করা হবে, আল্লাহর মনোনীত দ্বিন ইসলামকে প্রবল করা হবে এবং মুসলিমদের এমন শক্তি ও শৌর্যবীর্য দান করা হবে যে তাদের অন্তরে শত্রুর কোনো ভয়ভীতি থাকবে না।