কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে কোরবানির গোশত কয় ভাগ করতে হবে তার ইঙ্গিত এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করেন-
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ আর কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। এরপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও; যে কিছু চায় না তাকে এবং যে চায় তাকেও। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।(সুরা হজ : আয়াত ৩৬)
উল্লেখিত আয়াতে কারিমা থেকে সুস্পষ্ট যে, কোরবানির গোশত মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করার একটি নির্দেশনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাহলো- ১. কোরবানি দাতা নিজেদের জন্য রাখবে তথা আহার করা।
২. আত্মীয়-স্বজনদের এক ভাগ দেওয়া। যারা চায় না।
৩. যারা অভাবি বা গরিব; (যারা চায় এবং না চায়) তাদের এক ভাগ দেওয়া।
অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররাই কোরবানির পশুর গোশতকে উল্লেখিত তিন ভাগে ভাগ করাকে মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।
কোরবানি হবে না; এমনটি ভাবার কারণ নেই তবে হ্যাঁ, কেউ যদি তিন ভাগ করার ক্ষেত্রে কম-বেশি করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কোরবানি হবে না বা কোরবানি নষ্ট হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কিংবা চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা কোরবানি দাতার জন্য কোরবানির পশুর গোশত একেবারে পাল্লায় মেপে তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক কোনো বিষয় নয়।বরং কোরবানির পশুর এ গোশত ভাগ না করে এমনিতেই প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-অসহায়কে দেয়া যাবে। এ জন্য ভাগ করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সুতরাং কোরবানিদাতা ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করে তা হাদিয়া বা দান করার পাশাপাশি নিজেরাও আহার করতে পারেন। তাতে মুস্তাহাবের ওপর আমল হয়ে যাবে।
আবার চাইলে নিজের ইচ্ছা মতো ভাগ না করেও হাদিয়া দিতে পারেন বা দান করতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা নেই।প্রচলিত সমাজের ভাগ দেশের অধিকাংশ এলাকায় একটা রেওয়াজ প্রচলিত আছে যে, সমাজের ভাগ। সেখানে পুরো গ্রাম বা এলাকা থেকে সমাজের ভাগ নাম দিয়ে বিভিন্ন কোরবানির পশুর গোশত এক স্থানে জমা করা হয়। পরে তা গরিব-দুঃখীর মাঝেসহ সবার ঘরে ঘরে বণ্টন করা হয়।
এভাগে গোশত উঠিয়ে তা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। তবে জোরপূর্বক না নিয়ে বরং সেচ্ছায় খুশি মনে সামাজিকভাবে এভোবে গোশত সংগ্রহ করে গরিব এবং অভাবি মানুষের কাছে গোশত পৌঁছে দেওয়াও মন্দ নয়।তবে এর একটা কুপ্রভাবও আছে- যিনি কোরবানি করেছেন, তিনি হয়তো তার পরিচিত কোনো গরিব বা একান্ত কাউকে দেবেন। আবার হয়তো এখন কোনো গরিব বা অন্য কাউকে দেবেন না ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরে গরিব-অসহায়দের দেবেন বা খাওয়াবেন।
আবার হয়তো তিন ভাগের একভাগ হয়তো পুরোপুরি গরিবকে দেবেন না কিছু কম বেশি দেবেন। ইসলাম এ স্বাধীনতা প্রত্যেক কোরবানিদাতাকেই দিয়েছেন। সমাজের লোক যদি একভাগ গোশত নিয়ে যায়। তাতে তখন আর করার কিছু থাকে না।অনেক সময় লজ্জায় পড়ে হলেও এক্ষেত্রে কিছু বলা যায় না। এ বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অবৈধ বা গোনাহের পর্যায়ে চলে যায়। কারণ মনে সন্তুষ্টিতে না দিয়ে সমাজের চাপের কারণে দিলে তা কোনো অবস্থাতেই বৈধ বা জায়েজ থাকে না।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার ভাগের কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেভাবে দিকনির্দেশনা ও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের উপদেশ অনুযায়ী কোরবানির গোশত ভাগ ও আহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।