নবি-রাসুল আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়াই কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। কেয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হচ্ছে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন। কারণ তিনি হলেন সর্বশেষ নবি ও রাসুল। কেয়ামতের অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো নবি ও রাসুল আসবেন না। নবি-রাসুলের আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থই হলো কেয়ামত সন্নিকটবর্তী। তবে কেয়ামতের আগের আরও কিছু আলামত প্রকাশ পাবে। যা তুলে ধরা হলো-
কেয়ামত সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বান্দার সতর্কতা জন্য ঘোষণা করেন-
کُلُّ مَنۡ عَلَیۡهَا فَانٍ وَّ یَبۡقٰی وَجۡهُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ
জমিনের উপর যা কিছু রয়েছে, সবই ধ্বংসশীল। আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা। (সুরা আর রহমান : আয়াত ২৬-২৭)
কেয়ামতের আগে যেসব আলামত প্রকাশ পাবে
১. মানুষ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনে প্রতিযোগিতা করবে।
২. গচ্ছিত সম্পদের তথা আমানতে খেয়ানত করবে।
৩. জাকাত দেওয়াকে জরিমানা মনে করবে।
৪. ধর্মীয় শিক্ষার বিপরীতে (বাদ দিয়ে জাগতিক) বিদ্যা অর্জন করবে।
৫. পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে।
৬. মায়ের সঙ্গে (সন্তান) খারাপ আচরণ করবে।
৭. বাবাকে বাদ দিয়ে (সন্তান তার) বন্ধুকে আপন করে নেবে।
৮. মসজিদে শোরগোল (বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি) হবে।
৯. জাতির দূর্বল ব্যক্তিরা সমাজের নেতৃত্ব দেবে।
১০. নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।
১১. খারাপ কাজে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করবে এবং খারাপ কাজের ভয়ে ওই ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে।
১২. বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ বেড়ে যাবে।
১৩. মদ পান করা হবে।
১৪. বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন আগের প্রজন্মকে অভিশাপ দেবে।
১৫. এ সময়গুলোতে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে একটি ভূমিকম্প ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি)
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়
যখনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। সে সময় কী ঘটবে; তা কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের আগে ভূমিকে এমনভাবে প্রকম্পিত করবেন যে, জমিন তার গর্ভে ধারণ করা সব বস্তুকে বের করে দেবেন। কোরআনুল কারিমে এ কথা এভাবে আল্লাহ তাআলা এভাবে ঘোষণা করেছেন-
اِذَا زُلۡزِلَتِ الۡاَرۡضُ زِلۡزَالَهَا
পৃথিবীকে যখন তার প্রচণ্ড কম্পনে কাঁপিয়ে দেওয়া হবে। (সুরা যিলযাল : আয়াত ১)
وَ اَخۡرَجَتِ الۡاَرۡضُ اَثۡقَالَهَا
পৃথিবী তার (ভেতরের যাবতীয়) বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে, (সুরা যিলযাল : আয়াত ২)
وَ قَالَ الۡاِنۡسَانُ مَا لَهَا
আর মানুষ বলবে এর কী হয়েছে? (সুরা যিলযাল : আয়াত ৩)
یَوۡمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخۡبَارَهَا
সে দিন পৃথিবী তার (নিজের উপর সংঘটিত) বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। (সুরা যিলযাল : আয়াত ৪)
এ হলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আলামত ও সংঘটিত হওয়ার সময়ের ভয়াবহ দিকনির্দেশনা। এসব আলামত ও ভয়াবহ অবস্থার প্রেক্ষিতে নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে জীবনের শেষ মুহূর্তভেবে উল্লেখিত আলামতগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের সব আলামত ও তার ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। ঈমান ও নেক আমলের ওপর জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।