যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

জুমার দিনের আমলের বিশেষ ফজিলত

শুক্রবার মুমিন মুসলমানের বিশেষ ইবাদতের দিন। দিনটির অনেক বিশেষ আমল আছে। তন্মধ্যে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা একটি। কোরআনুল কারিমের ১৮নং সুরা এটি। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০ এবং ১২ রুকু। সুরাটি পবিত্র নগরী মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরার আমলে তেলাওয়াতকারীর প্রতি সাকিনাহ বা প্রশান্তি নাজিল হয়।

সুরাটিতে আল্লাহ তাআলা বিশেষ তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার বর্ণনা করেছেন-

১. ওইসব যুবকের ঘটনা, যারা ঈমান আকিদা রক্ষার জন্য নিজেদের ওপর কোরবানি করে নিজেদের আবাস, সহায়-সম্পদের মায়া ত্যাগ করে দূর অজানায় কোনো পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে কাটানোর পর আল্লাহ তাআলা তাদের আবার জাগ্রত করেন।

২. হজরত মুসা ও খিজির আলাইহিস সালামের মাঝে সংঘটিত ঘটনাও এ সুরায় আলোচিত হয়েছে।

৩. দুনিয়ার ক্ষমতাশালী বাদশাহদের একজন বাদশাহ জুলকারনাইন । যিনি সারাবিশ্বের বাদশাহ ছিলেন এবং সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালের অনেক তথ্যবহুল ঘটনার জন্যও এ সুরাটি যেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

জুমার দিনের বিশেষ আমল হলো- পুরো সুরাটি তেলাওয়াত করা কিংবা প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করা। এতে রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন বর্ণনায় এ সুরার তেলাওয়াতকারীর জন্য বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলো-

১. হজরত সাহাল ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করবে; তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায়। আর যে পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ)

২. হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করলেন। তিনি আওয়াজকে উঁচু-নিচু করছিলেন, ফলে আমরা মনে করলাম দাজ্জাল খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। এরপর যখন আমরা উনার কাছে গেলাম তখন তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমাদের কী হলো! আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূল! আপনি সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করেছিলেন, আওয়াজকে উঁচু-নিচু করেছিলেন- তাই আমরা মনে করলাম দাজ্জাল হয়তো খেজুর বাগানেই আছে। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছুতে এত বেশি ভয় আমাকে দেখানো হয়নি। যদি আমি তোমাদের মাঝে থাকা অবস্থায় সে বের হয়, তাহলে তোমাদের ছাড়া আমি সর্বপ্রথম তার প্রতিরোধ করব। আর যদি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় সে বের হয়, তাহলে প্রত্যেকে তার প্রতিরোধ করবে। আল্লাহর শপথ! প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আমার খলিফা রয়েছে। নিশ্চয়ই দাজ্জাল কোঁকড়া চুলবিশিষ্ট যুবক হবে এবং তার চোখ কানা হবে। যেন আমি আব্দুল ওযা ইবনে কাতালের মতো তাকে দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যে তাকে পাবে সে যেন সুরা কাহফের প্রথম অংশ পড়ে। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফ পড়বে যেমনভাবে (সুরাটি) নাজিল করা হয়েছে, তাহলে সেটা তার স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত নূর হবে এবং যে সুরার শেষ দশ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে এবং দাজ্জাল তার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (নাসাঈ)

৪. হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকবে। (মুসলিম, আবু দাউদ)

৫. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে।

৬. অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গুনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হচ্ছে যে, কবিরা গুনাহ তওবা করা ছাড়া ক্ষমা হয় না।

৭. হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার কাছে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঢেকে ফেলল। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি করতে লাগলো। এরপর সকালে ওই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে রাতের ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি (প্রিয় নবি) বললেন, ওটা ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তেলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। (বুখারি, মুসলিম)

৮. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সব ধরণের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

৯. হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফ নাজিল হওয়ার মতো অবিকল তেলাওয়াত করবে, তার জন্য কেয়ামতের দিন সেটা নূর হবে। (শুয়াবুল ঈমান)

১০. হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যে সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করবে; সে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে। অন্য হাদিসে ভিন্ন রেওয়ায়েতে শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারে উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ)

সুতরাং প্রথম বা শেষ ১০ আয়াত অথবা উভয় দিক দিয়ে মোট ২০ আয়াত যে মুখস্ত করবে সেও হাদিসের ঘোষিত ফজিলত লাভের অন্তর্ভুক্ত হবেন।

হাদিসে পুরো সুরাটি তেলাওয়াত করার কথাও এসেছে আবার প্রথম ১০ আয়াত এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করার কথাও এসেছে। এর প্রতিটিতে আলাদা আলাদা ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং যারা এটি তেলাওয়াত করতে সক্ষম তাদের উচিত পুরো সুরাটি জুমার দিন সন্ধ্যার আগেই তেলাওয়াত করে নেওয়া। আর যারা পুরো সুরাটি তেলাওয়াত করতে সক্ষম নয়, তারা অন্তত প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করবে। আর তাতে মিলবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা কাহাফের যথাযথ ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিত লাভের তাওফিক দান করুন। দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।