পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ও বিশুদ্ধ গ্রন্থ আল-কোরআন। বান্দার প্রতি আল্লাহর যত অনুগ্রহ আছে এর মাঝে অন্যতম, পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা। আমরা পুরো পৃথিবী চষে অনেক ডিগ্রি অর্জন করি, কিন্তু আল্লাহ তাআলার কালাম শিখতে পারিনি। যে কিতাব সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস, সে মহাগ্রন্থে আমার রব কি বলেছেন তা আমি জানতে পারিনি, তাহলে এই জীবনের আর কী অর্থ আছে! যে কিতাবকে আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন, সেই মহাগ্রন্থ থেকে আমি কিছুই আহরণ করতে পারলাম না। এর চেয়ে দুঃখ আর কষ্ট কী আছে!
কোরআনহীন হৃদয়
যে হৃদয়ে কোরআন নেই সে হৃদয়ের কোনো মূল্য হতে পারে না, তা শূন্য ঘরের মতো বিরান। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার হৃদয়ে কোরআনের কিছুই নেই সে পরিত্যক্ত ঘরের মতো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৩)
কোরআন জান্নাতে নিয়ে যাবে
যে ব্যক্তি তার হৃদয়ে কোরআনকে ধারণ করবে, হেরা গুহার ঐশী আলো আহরণ করবে, তাকে সে কোরআন জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। জাবের (রা.) বলেন,এই কোরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী; তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কোরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে। (আত-তারগিব, হাদিস : ১৪২৩)
কবরের সঙ্গী
অন্ধকার কবরে যেখানে আমাদের সঙ্গে কেউ থাকবে না। চারদিকে শুধু অন্ধকার। যদি আমার ভেতর কোরআনের আলো থাকে তাহলে সে সময় এ কোরআন আমাকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোনো এক সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এক সাহাবি একটি কবরের ওপর তার তাঁবু খাটান। তিনি জানতেন না যে তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে কবরে একটি লোক সুরা মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করল। তারপর তিনি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি একটি কবরের ওপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে একটি লোক সুরা মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ সুরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আজাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০)
ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে
যে ঘরে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কোরআন তিলাওয়াত হয়, সে ঘর হতে শয়তান পলায়ন করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না। (এগুলোতে কোরআন তিলাওয়াত করো) কারণ যেসব ঘরে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর হতে শয়তান ভেগে যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১১৯)
তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সাক্ষ্য দান করবে
যে ব্যক্তি কোরআনের হক আদায় করবে, কোরআন বিপদের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। আবু মালিক আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক অংশ। আল-হামদুলিল্লাহ মিজানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে এবং সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দেবে। নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল আলো। সদকা হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি। আর কোরআন হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। বস্তুত সব মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর আজাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪২২)
অন্তরের মরীচিকা দূর করে
মানুষের শরীর যেভাবে অসুস্থ হয় তেমনি মানুষের কলবও অসুস্থ হয়। আর কলব অসুস্থ হলে তাতে মরীচিকা পরে যায়। সে অন্তর দিয়ে আর ভালো কাজ করার আগ্রহ জাগে না। পাপের বোঝার এক অসহ্য পীড়ায় ভুগতে থাকে। যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে আল্লাহ তার অন্তরের সেই পাপের মরীচিকা দূর করে দেবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। তাঁকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি (সা.) বলেন, বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা ও কোরআন তিলাওয়াত করা। (শুআবুল ঈমান, হাদিস :১৮৫৯)