আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন মুমিনের সবচেয়ে বড় কামনা ও বাসনা। ক্ষুদ্র এ জীবনের সবটুকু দিয়েও যদি অর্জন করা যায় পবিত্র সে ভালোবাসা, তবে এটাই বান্দার পরম সৌভাগ্য ও বিশাল প্রাপ্তি। মুমিনের কিছু গুণ এমন রয়েছে যেগুলো আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। যারা এসব গুণের অধিকারী আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাঁর ভালোবাসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
১. আল্লাহভীরু মুমিন : আল্লাহকে ভয় করা এমন এক মহৎ গুণ, যাকে হাদিসে ভালো কাজের চালিকাশক্তি বলা হয়েছে। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়ার গুণ অর্জিত হয়, তার পক্ষে কোনো অন্যায়, অশ্লীল ও অপরাধমূলক কাজে জড়ানো সম্ভব নয়। অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে খোদাভীরু ব্যক্তির বিকল্প নেই। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ মুত্তাকি মুমিনের প্রতি স্বীয় ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ স্বীয় অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে আল্লাহ পরহেজগারদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৬)
২. সৎকর্মশীল মুমিন : কোরআনের ভাষায় সৎকর্মশীল বলা হয় সেসব ব্যক্তিকে, যারা প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহর পথে নিষ্ঠার সঙ্গে দান-সদকা করেন, ক্রোধ সংবরণ করে মানুষকে ক্ষমা করে দেন এবং বিপদের মুহূর্তে মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সচ্ছল-অসচ্ছল উভয় অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে এবং ক্রোধ দমন করে ও লোকদের ক্ষমা করে আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
৩. সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা : প্রতিটি মানুষই জীবনে সফল হতে চায়। একটুখানি সাফল্যের আশায় দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। কিন্তু সাফল্যের সোনার হরিণ পেতে সবার আগে তাকে পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখতে হবে। যারা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে চলে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওপর নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
৪. বিপদে ধৈর্যধারণ : দুনিয়ার জীবন নানাবিদ সমস্যা-সংকট ও বিপদ-আপদে ঘেরা। জীবনে চলার পথে আমাদের নানা সমস্যার শিকার হতে হয়। এসব কঠিন মুহূর্তে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নীরবে ধৈর্যধারণ করে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার এবং আল্লাহর অফুরন্ত ভালোবাসা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬)
৫. ন্যায়পরায়ণ শাসক : আল্লাহ নিজে ন্যায়পরায়ণ। যেমনিভাবে তিনি দুনিয়াতে কারো ওপর সামান্যতম জুলুম করেননি, তেমনি পরকালেও কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ অবিচার করবেন না। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো ওপর অনুপরিমাণও জুুলুম করেন না। (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৪৪)
সুতরাং দুনিয়াতে যারা আল্লাহর এই মহান গুণে গুনান্বিত হয়ে ইনসাফের সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসবেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
৬. একনিষ্ঠ তাওবাকারী : মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধপ্রবণতা এবং প্রবৃত্তির ফাঁদে পা দিয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। কিন্তু গুনাহের পর গোঁ ধরে বসে থাকা, অনুতপ্ত ও লজ্জিত না হওয়া অনুচিত। এমন কাজ আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি অনিবার্য করে। পক্ষান্তরে যারা গুনাহের পর স্বীয় কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং একনিষ্ঠভাবে তাওবা করে আল্লাহ তাদের প্রতি নিজ সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
৭. পবিত্রতা অর্জন : ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বিনের মৌলিক বিধানাবলির পরতে পরতে রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার তাগিদ। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)