হজ তিন প্রকার, এর যে কোনটি হাজী সাহেব এখতিয়ার করতে পারেন। আর যেটিই পালন করেন না কেন, তার হজ শুদ্ধ হবে। এ প্রকারগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :
প্রথম প্রকার : তামাত্তু
আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরামের নিয়্যত করা। হজের মাস সমূহ হল শাওয়াল, যিলক্বদ এবং যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন। এ কথা বলে ইহরামের নিয়্যত করবে যে, لبيك عُمْرَةً ‘লাববাইকা উমরাতান ।
এরপর উমরার কাজসমূহ পরিপূর্ণরূপে সমাধা করবে। তাওয়াফ, সা‘য়ী ও মাথার চুল হলক করলে কিংবা ছেঁটে নিলে উমরার কাজ শেষ হবে এবং ইহরামের কারণে তার উপর যা কিছু হারাম ছিল সবই তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে সে মক্কার যে স্থানে অবস্থান করবে সেখান থেকেই শুধু হজের ইহরামের নিয়্যত করবে এ কথা বলে যে,
لبيك حَجاً
লাববাইকা হাজ্জান
তামাত্তু হজ পালনাকারীর উপর হাদী যবাই করা ওয়াজিব। আর হাদী হল একটি ছাগল কিংবা উটের এক সপ্তমাংশ অথবা গরুর এক সপ্তমাংশ। যদি কুরবানীর জন্য হাদী না পাওয়া যায়, তাহলে হজের মধ্যে তিন দিন রোযা রাখতে হবে এবং নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এলে সাতদিন রোযা রাখবে। আলেমগণের বিশুদ্ধ মতের আলোকে হজের প্রকারভেদের মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু হজ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদীর পশু না নেয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা ও মারওয়ায় সা‘য়ী করবার পর সাহাবীগণকে বলেছিলেন,
«فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْىٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَة»
‘‘তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর হাদী নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এ কাজ গুলোকে উমরা হিসাবে গন্য করে।’’ এ প্রকার হজ উত্তম হওয়ার আর একটি কারণ হল - হাজী সাহেব তার সফরে হজ ও উমরার উভয়কাজ ভিন্নভাবে সম্পাদন করেছেন।
দ্বিতীয় প্রকার : ক্বিরান
আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে হজ ও উমরার জন্য একত্রে ইহরামের নিয়্যত করা। হজের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় একথা বলবে যে,
لبيك عُمرةً و حَجاً
“লাববাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান”
অত:পর মক্কায় পৌঁছে উমরার তাওয়াফ করবে এবং হজ ও উমরার জন্য হজের সা য়ী তাওয়াফে ইফাদার পর পর্যন্ত বিলম্ব করতে পারবে। এভাবে মাথার চুল হলক না করে কিংবা না ছেঁটে ইহরাম অবস্থায় থাকবে। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে মিনায় রওয়ানা করবে এবং হজের বাকি কাজগুলো সমাধা করবে। তামাত্তু হজকারীর মতই ক্বিরান হজ আদায়কারীর উপরও হাদী যবাই করা ওয়াজিব। তবে হাদী না পেলে হজের মধ্যে তিনদিন ও পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার পর সাতদিন রোযা রাখবে।
তৃতীয় প্রকার : ইফরাদ
তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু হজের জন্য ইহরামের নিয়্যত করবে। হজের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় বলবে-
«لبيك حَجاً»
লাববাইকা হাজ্জান
ইফরাদকারী ক্বিরান হজ পালনকারীর মতই আমল করবে। অবশ্য ক্বিরান পালনকারীর উপর হাদী যবাই করা ওয়াজিব, আর ইফরাদকারীর উপর হাদী ওয়াজিব নয়; কেননা সে ক্বিরান ও তামাত্তু কারীর ন্যায় হজ ও উমরাকে একত্র করে নি। এ তিন প্রকার হজের যে কোনটি পালনের ব্যাপারে হাজীসাহেবের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু তন্মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু - ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদী এর পশু নেয়নি, যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।
আপনি যখন হজ কিংবা উমরা করার সংকল্প নিয়ে আল্লাহর সম্মানিত ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন, তখন জেনে নিন যে মিকাত থেকে ইহরাম করাই হল হজের কাজে আপনার প্রবেশের সূচনা। আর ইহরাম করার অর্থ হল - হজ কিংবা উমরার কাজে প্রবেশের নিয়্যত করা।
যারাই হজ কিংবা উমরা করার ইচ্ছা নিয়ে মক্কায় আগমন করবে, তাদের প্রত্যেককেই মীকাত থেকে ইহরামের নিয়্যাত করতে হবে। আর মীকাত হল সে সকল সুনির্দিষ্ট স্থানসমূহ যা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হতে বায়তুল্লাহ শরীফে আগমনকারীদের জন্য বর্ণনা ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেন তারা সেখান থেকে বায়তুল্লায় পৌঁছার আগেই ইহরাম করে নেয়। এ সকল মীকাত হল নিম্নরূপ:
যুল হুলাইফা:
এটা হল মদীনাবাসি এবং যারা তাদের এ পথ দিয়ে আসবে তাদের সকলের মীকাত। মাসজিদে নববী ও এ স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্ব হল তের কিলোমিটার। এটি মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মীকাত। মক্কা ও এর মধ্যকার দূরত্ব হল চারশত বিশ কিলোমিটার। বর্তমানে এ স্থানের নাম হল আবইয়ার আলী ।
আল জুহফা:
এটি রাবেগ শহরের নিকটবর্তী একটি গ্রাম। লোকজন এখন রাবেগ থেকেই ইহরামের নিয়্যাত করে, কেননা রাবেগ জুহফার সামান্য একটু আগে অবস্থিত। এ স্থান ও মক্কার মধ্যবর্তী দূরত্ব হল দুইশত আশি কিলোমিটার। এটা মিশর ও শাসবাসীদের মীকাত এবং সউদি আরবের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার দেশসমূহের অধিবাসী এবং যারা এ পথ হয়ে আগমন করবে তাদের সকলের মীকাত।
কারনুল মানাযেল :
একে বলা হয় ‘আস সাইল আল কাবীর । মক্কা ও এর মধ্যকার দূরত্ব হল আটাত্তোর কিলোমিটার। এটা নাজদবাসী, আরব উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক ও ইরান সহ সকল পূর্বঞ্চলীয় লোকদের এবং যারা এ পথে আগমন করবে তাদের মীকাত। বর্তমানে এ মীকাতের সমান্তরালে রয়েছে মীকাতে ওয়াদী মুহরিম যা তায়েফের পশ্চিমে আল হাদা রোডে অবস্থিত। মক্কা থেকে এর দূরত্ব পঁচাত্তর কিলোমিটার। এটা তায়েফবাসী ও তাদের পথ দিয়ে আগমনকারীদের মীকাত। এটা আলাদা কোন মীকাত নয়।
ইয়ালামলাম:
আজকাল এ স্থানটিকে বলা হয় সা দিয়া, যা মক্কা থেকে একশত বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটা হল ইয়ামানবাসী ও তাদের পথ দিয়ে যারা আসবে তাদের মীকাত। যাত- ইর্ক:
এ স্থান হল ইরাকবাসী ও পূর্বাঞ্চলের লোকদের মীকাত। বর্তমানে এ স্থান পরিত্যাক্ত; কেননা সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। স্থানটি মক্কা থেকে একশত কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ইরাক ও পূর্বাঞ্চলের হাজীগণ আস সাইল আল কাবীর থেকে কিংবা যুল হুলাইফা থেকে ইহরামের নিয়্যাত করে থাকে।
আর মক্কাবাসীগণ হজের জন্য নিজ নিজ বাসস্থান থেকেই ইহরামের নিয়্যত করবে। আর উমরার জন্য তারা তান‘য়ীম কিংবা হারাম সীমানার বাইরে যে কোন স্থান থেকে ইহরামের নিয়্যত করবে। হজের সংকল্প নিয়ে যে সকল মুসলিম এ মীকাতসমূহ অতিক্রম করবে তাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব হল সেখান থেকে ইহরামের নিয়্যাত করা। যদি হজের ইচ্ছা নিয়ে ইহরাম করা ছাড়াই কেউ স্বেচ্ছায় মীকাত অতিক্রম করে তবে তার উপর ওয়াজিব হবে মীকাতে ফিরে এসে সেখান থেকে ইহরাম করা। তা না করলে তাকে দম দিতে হবে। আর তা হল -মক্কায় একটি ছাগল যবেহ করে সেখানকার দরিদ্র লোকদের মধ্যে তা বন্টন করে দেয়া। যদি কেউ ভুলে কিংবা নিদ্রাবস্থায় ইহরাম না করেই মীকাত অতিক্রম করে, তার উপর ওয়াজিব হল স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে ফিরে গিয়ে মীকাত থেকে ইহরাম করা। তা না করলে তাকেও দম দিতে হবে, যেরূপ ইত;ঃপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।