খাঁটি মনে তওবা করা-
তওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন বা ফিরে যাওয়া। যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অপছন্দ করেন তা থেকে যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার নাম তওব্তাহোক এ সকল কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে। সাথে সাথে অতীতের এ ধরনের কাজ থেকে অনুতপ্ত হতে হবে, কাজগুলো ত্যাগ করতে হবে ও দৃঢ় সংকল্প করতে হবে যে ঐ ধরনের কাজ আর কোন দিন করব না। আরো সংকল্প করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় কাজ যেমন আদায় করব তেমনি তার নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিহার করব।
যখনই কোন পাপ কাজ সংঘটিত হবে তখন সাথে সাথে তা থেকে তওবা করা একজন মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। কেননা, তার জানা নেই কখন তার মৃত্যু হবে আর কতক্ষণ সে বেঁচে থাকবে। মনে রাখতে হবে, একটি পাপ বা গুনাহ অন্য আরেকটি গুনাহের দ্বার খুলে দেয়। তওবা না করলে এমনিভাবে গুনাহের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর সময়ের মর্যাদা হিসেবে গুনাহের শাস্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অধিক মর্যাদাসম্পন্ন বা ফজিলতপূর্ণ সময়ে গুনাহের কাজের শাস্তি বেশি হয়। প্রথমত গুনাহের শাস্তি দ্বিতীয়ত ফজিলতপূর্ণ সময়ের অবমাননা ও অবমূল্যায়ন করার শাস্তি।
ইমাম নবভী রহ. বলেন : 'মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল ধরনের গুনাহ থেকে তওবা করা যা সে করেছে। যদি কোন এক ধরনের গুনাহ থেকে তওবা করে তাহলেও তার তওবা সঠিক হবে। তবে অন্য গুনাহের তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। কোরআনের বহু আয়াত, একাধিক হাদিস ও ইজমায়ে উম্মাহ তওবা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন :
'হে মোমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা র্কতবিশুদ্ধ তওবা ; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দেবেন না নবীকে এবং তার মোমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে 'হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।'
ইবনে কায়্যিম রহ. বলেন : খাঁটি তওবা (তওবা নাছুহ) হল তিনটি বিষয়ের সমষ্টির নাম। প্রথম : সকল প্রকার গুনাহ থেকে তওবা করা। এমন যেন না হয় কয়েকটি গুনাহ থেকে তওবা করলাম, দু একটি রেখে দিলাম এ ভেবে যে এ থেকে আরো কয়েক দিন পরে তওবা করব। এমন করলেও তওবা হবে, তবে তা তওবা নাছূহ হিসেবে গৃহীত হবে ন্তাযে তওবা করতে আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্বিতীয় : সম্পূর্ণভাবে পাপ পরিত্যাগ করার জন্য সততার সাথে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। এমন যেন না হয় যে তওবা করলাম আর মনে মনে বললাম জানি না, আমি এ তওবার উপর অটল থাকতে পারব কি-না।
তৃতীয় : তওবা খালেছভাবে আল্লাহকে ভয় করে ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষেই করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না।
অবশ্যই এ তওবার সাথে আল্লাহ তাআলার কাছে অব্যাহতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা ও সকল গুনাহ বা পাপ নিজের থেকে মিটিয়ে দিতে হবে। তা হলেই কামেল তওবা বলে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।[