কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

ইসলামের ইতিহাসে সফর মাস

সফর মাসে ইসলামের বিভিন্ন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো—

হিজরতের সূচনা

নবুয়তের চতুর্দশ সালে ২৭ সফর মধ্যরাতের কিছু সময় পর রাসুল (সা.) নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে  আবু বকর (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে রাতের আঁধারেই বের হয়ে মক্কা থেকে পাঁচ মাইল দূরে সাওর পর্বতে অবস্থান করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২০৮)

আবওয়া যুদ্ধ

যেসব যুদ্ধে রাসুল (সা.) নিজে অংশ নিয়েছেন, তার মধ্যে এটি প্রথম যুদ্ধ, যা সংঘটিত হয় ২ হিজরির সফর মাসে। 

এ যুদ্ধের ঝাণ্ডা ছিল শুভ্র। ঝাণ্ডাবাহী ছিলেন হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব (রা.)। মদিনায় রাসুল (সা.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-কে নিযুক্ত করা হয়। কুরাইশের কাফেলাকে প্রতিরোধ করার জন্যই মূলত রাসুল (সা.) এই অভিযানে বের হন।  

কিন্তু পথে কোনো কাফেলার সঙ্গে দেখা হয়নি। এই অভিযানে জুমরা গোত্রের সরদার মুখশি ইবনে আমর আজজমরির সঙ্গে একটি সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় রাসুল (সা.) ১৫ রাত মদিনার বাইরে অবস্থান করেন। (জাদুল মাআদ ৩/১৬৪, ১৬৫)

কাফিরদের প্রতারণা ও ‘রজি’র ঘটনা

তৃতীয় হিজরির সফর মাসে আদাল ও কারা গোত্রের কিছু লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে বলে, আমরা ইসলামচর্চায় আগ্রহী। এমন কিছু লোক আমাদের মধ্যে নিযুক্ত করুন, যারা আমাদের ইসলাম শিক্ষা দেবেন। তাদের আগ্রহ ও অনুরোধের ভিত্তিতে রাসুল (সা.) ১০ জন সাহাবিকে তাদের জন্য মনোনীত করেন। আসেম ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর নানা আসেম ইবনে সাবেত (রা.)-কে এই দলের আমির মনোনীত করা হয়। তাঁরা যাওয়ার পথে রাবেগ ও জেদ্দার মধ্যবর্তী স্থানে হুজাইল গোত্রের রাজি নামক একটি কূপের কাছে পৌঁছলে আদল ও কারা গোত্রের লোকজন হুজাইল গোত্রের একটি শাখা বনু লাহইয়ানকে এ ১০ জন সাহাবির ওপর আক্রমণ করার জন্য লেলিয়ে দেয়। বনু লাহইয়ানের ১০০ তিরন্দাজ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং তাদের অবরোধ করে ফেলে। 

আসেম (রা.) তাঁর সাথিদের নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সাতজন সাহাবি ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। বাকি তিনজন সাহাবির সামনে বনু লাহইয়ান তাদের চুক্তির কথা বলে তাদের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু তারা সামান্য শক্তি পেতেই ওই তিন সাহাবির ওপর হামলা করে বসে। তাতে আরো একজন সাহাবি শহীদ হন। বাকি দুজন সাহাবি খুবাইব ও জায়দ (রা.)-কে তারা মক্কায় এনে বিক্রি করে দেয়। এই দুজন সাহাবি বদরের যুদ্ধে মক্কার নেতাদের হত্যা করে। (জাদুল মাআদ ৩/২৪৪)

খায়বর বিজয়

রাসুল (সা.) সপ্তম হিজরির মুহররম মাসের শেষের দিকে খায়বরের দিকে রওনা হন এবং সফর মাসে খায়বর বিজয় করেন।

সাহাবাদের ইসলাম গ্রহণ 

আমর ইবনুল আস (রা.), খালেদ ইবনে মুগিরা (রা.), জামরা ইবনে নুমান (রা.), ছুমামা ইবনে আছাল (রা.) প্রমুখ সফর মাসে ইসলাম গ্রহণ করেন।

আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর শুভ বিবাহ

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, দ্বিতীয় হিজরির সফর মাসে আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতেমা (রা.)-এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। (আস-সিরাহ আন নববিয়্যাহ লিবনে কাসির, ৪/৬১১)

শেষ সামরিক অভিযান

১১ হিজরির সফর মাসে রাসুল (সা.) উসামা ইবনে জায়দের নেতৃত্বে রোমানদের উদ্দেশে শেষ সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। সাহাবিরা উসামা ইবনে জায়দের নেতৃত্বে একত্র হয়ে যাত্রা করেন। তাঁরা মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে জুরফ নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর অসুস্থতার কারণে বাহিনীর অগ্রযাত্রা থেমে যায়। (আল-মুনতাকা ফি সিরাতিল মোস্তফা : ১/৮২)

রাসুল (সা.)-এর অসুস্থতার সূচনা

একাদশ হিজরির ২৯ সফর। রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকিতে গেলেন কোনো এক জানাজায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর মাথাব্যথা শুরু হয়। এই অসুস্থতাই ছিল রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুরোগের সূচনা। এই অসুস্থতা নিয়ে রাসুল (সা.) ১১ দিন পর্যন্ত নামাজের ইমামতি করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৫২৯)

সফর মাসে ইন্তেকাল 

আবু তালহা আনসারি (রা.) (৩০ হি.), আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) (৩২ হি.), ইমাম নাসায়ি (রহ.) (৩০৩), আল্লামা নববী (রহ.) (২৭৬ হি.), মুজাদ্দিদে আলফেসানি (রহ.) (১০৩৪ হি.), শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ.) (১৩৩৯ হি.), প্রমুখ সফর মাসে ইন্তেকাল করেন।