যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

উস্তাদ শফিকুজ্জামান ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মসজিদে নববীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন

উস্তাদ শফিকুজ্জামান একজন পাকিস্তানি ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মসজিদে নববীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। তিনি ২ নভেম্বর ১৯৫৬ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তুর্কি ক্যালিগ্রাফি শিল্পী হামিদ আইতাক তাঁর শিল্পীজীবনের অনুপ্রেরণা।  আরবি খত্তে সুলুস বা সুলুস লিপিতে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

উস্তাদ শফিকুজ্জামানের স্বপ্ন ছিল আল্লাহ তাঁর ভেতর যে শিল্পসত্তা দান করেছেন তা মসজিদে নববীর সেবায় উৎসর্গ করবেন। যেন জিয়ারতকারীদের চোখ শীতল হয় এবং মসজিদে নববীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ সালে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পান; যখন তিনি হিজাজের একটি ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিযোগিতার মূল বিষয় ছিল ১৩০ বছরের প্রাচীন একটি ক্যালিগ্রাফির সংস্কার এবং মসজিদে স্থাপনের জন্য নতুন নকশায় তা প্রস্তুত করা। সে প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই সঙ্গে তিনি মসজিদে নববীতে কাজ করার সুযোগ পান। বর্তমানে মসজিদে নববীর দেয়ালে শোভা পাচ্ছে তাঁর অসংখ্য শিল্পকর্ম। সমাদৃত এই শিল্পীর ক্যালিগ্রাফি স্থান পেয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র রওজার দেয়ালেও।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগে তিনি বিলবোর্ড, নামলিপি ও ব্যানার এঁকে জীবিকা উপার্জন করতেন। ফলে প্রতিযোগিতার আয়োজক সংগঠন প্রতিযোগী হিসেবে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করতে রাজি হচ্ছিল না। তাদের বক্তব্য ছিল, আপনি তো পেশাদার ক্যালিগ্রাফি শিল্পী নন। কিন্তু তিনি তাঁর বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন এবং প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে সক্ষম হন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিজয়ী হন এবং তাঁর স্বপ্নের জীবন লাভ করেন। তিনি মসজিদে নববীর ক্যালিগ্রাফি পুনরুদ্ধার বা সংস্কার প্রকল্পে স্থায়ী নিয়োগ পান।

মসজিদে নববীর ক্যালিগ্রাফি পুনরুদ্ধার বা সংস্কারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ আরব নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ক্যালিগ্রাফি সংস্কার কাজের ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হলে উস্তাদ শফিকুজ্জামান জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে যাবেন এবং সেখানে একটি ক্যালিগ্রাফি একাডেমি গড়ে তুলবেন। তাঁর জন্ম রাওয়ালপিন্ডি হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন করাচিতে। দশম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একটি বিজ্ঞাপন কম্পানিতে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তাদের হয়ে করাচির দৌ মেডিক্যাল কলেজের কাছে একটি বিলবোর্ডে কোরআনের আয়াত লিখছিলেন। তখন দুজন ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর জীবনের গতিপথ পাল্টে দেন। তাদের একজন তাঁকে সৌদি আরবের রিয়াদে নিয়ে আসেন। এর দুই বছর পর তিনি মসজিদে নববীর কাজে নিযুক্ত হন।

শফিকুজ্জামান মূলত সৌদি আরবের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার আবদুল্লাহ জুহদির শিল্পকর্মগুলো পুনরুদ্ধার ও সংস্কার করেন। জুহদি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় শাসক সুলতান আবদুল মাজিদ, যিনি নিজেও একজন দক্ষ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন; তাঁর সময় মসজিদে নববীতে অঙ্কন কাজ শুরু করেন। তিনি তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ ক্যালিগ্রাফিশিল্পী হওয়ার পরও অনেক আয়াত সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি তা পারেননি গম্বুজে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায়। শফিকুজ্জামান পুনঃস্থাপনের সময় অসম্পূর্ণ আয়াতগুলো সম্পূর্ণ করেন। পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পী শফিকুজ্জামান এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মর্যাদাকর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ২০১২ সালে মক্কায় আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক আরবি ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০১৪ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইড পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

তথ্যসূত্র : আরব নিউজ ডটপিকে, ইকোনমি ডটপিকে ও উইকিপিডিয়া