ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত স্থাপনা আয়া সোফিয়া মসজিদ হওয়ার তিন বছরপূর্তি উদযাপিত হয়েছে। মসজিদ হওয়ার পর দুই কোটি ১০ লাখ লোক তা পরিদর্শন করেন এবং ১৫০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। সোমবার (২৪ জুলাই) তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মসজিদটিতে ফজর নামাজের ইমামতি করেন তুরস্কের ধর্মবিষয়ক প্রধান ড. আলী ইরবাশ। এ সময় নামাজে উপস্থিত ছিলেন ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাউদ গুলসহ অসংখ্য মুসল্লি।
সংগৃহীত ছবি
ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত স্থাপনা আয়া সোফিয়া মসজিদ হওয়ার তিন বছরপূর্তি উদযাপিত হয়েছে। মসজিদ হওয়ার পর দুই কোটি ১০ লাখ লোক তা পরিদর্শন করেন এবং ১৫০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। সোমবার (২৪ জুলাই) তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মসজিদটিতে ফজর নামাজের ইমামতি করেন তুরস্কের ধর্মবিষয়ক প্রধান ড. আলী ইরবাশ। এ সময় নামাজে উপস্থিত ছিলেন ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাউদ গুলসহ অসংখ্য মুসল্লি।
আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম বিনিয়ামিন তুবজি উগলু জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ২৪ জুলাই করোনা মহামারির সময় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই দিন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের উপস্থিতিতে ৮৬ বছর পর এখানে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আয়া সোফিয়ার নির্দিষ্ট একটি অংশ মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফজর থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত তা সব মুসল্লির জন্য উন্মুক্ত থাকে। বিশ্বের অন্যান্য মসজিদ পরিদর্শনের মতো এখানকার দর্শকদেরও শালীন পোশাক পরতে হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মসজিদ কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করে থাকে। ইমাম বিনিয়ামিন আরো জানান, ২০২১ সালে ১৩ লাখ লোক আয়া সোফিয়া পরিদর্শন করেন। ২০২২ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬০ লাখ লোক তা পরিদর্শন করেন। অর্থাৎ ঐতিহাসিক এ স্থাপনার দর্শনার্থীসংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ ও এশিয়ার সব দেশের পর্যটকদের কাছে তা খুবই জনপ্রিয়।
২০২২ ও ২০২৩ সালে আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শনে ইন্দোনেশিয়ার দর্শনার্থীরা শীর্ষে রয়েছেন। কারণ তাদের অধিকাংশ হজযাত্রী সৌদি আরব যাওয়ার পথে ইস্তাম্বুলে বিরতি নেন এবং আয়া সোফিয়া দেখতে আসেন। তিনি আরো জানান, উসমানীয় শাসনকাল থেকে আয়া সোফিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা চলে আসছে। এর মধ্যে শবেকদর, শবেমেরাজসহ ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা উল্লেখযোগ্য। তুরস্কের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তর, ইস্তাম্বুলের দারুল ইফতা ও মসজিদের খতিব এবং ইমামদের সহযোগিতায় এসব রীতি পুনরায় চালু করা হচ্ছে। তা ছাড়া মসজিদ হওয়ার পর থেকে আয়া সোফিয়া প্রাঙ্গণে কোরআন, ফিকাহ, তাফসির, হাদিসবিষয়ক অসংখ্য দরস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত তিন বছরে এখানে ১২০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। মূলত তারা আয়া সোফিয়ায় এসে নিজেদের ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা দেন।
১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগ পর্যন্ত ৯১৬ বছর আয়া সোফিয়া খ্রিস্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শ বছর তা মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পর থেকে ৮৬ বছর ঐতিহাসিক স্থাপনাটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতঃপর ২০২০ সালে তা পুনরায় মসজিদ রূপে ফিরে যায়। মসজিদ হলেও তা সব ধর্ম ও বিশ্বাসের পর্যটকের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। ১৯৮৫ সালে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয় ঐতিহাসিক এই স্থাপনা। তুরস্কের পর্যটনবান্ধব স্থাপনাগুলোর মধ্যে স্থানটি অন্যতম। ২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের আদালত ১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভা কর্তৃক আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর করার আদেশ বাতিল করে। ফলে দীর্ঘ ৮৬ বছর পর ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি মসজিদের ঐতিহ্যে ফেরার পথ সুগম হয়। এরপর ২৪ জুলাই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের উপস্থিতিতে তাতে প্রথম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি