সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের তত্ত্বাবধানে মক্কায় গতকাল শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ৮৫টি দেশের দেড় শতাধিক আলেম ও মুফতি। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে মধ্যপন্থা, সহাবস্থান জোরদার সর্বোপরি ঐক্য ও সংহতি প্রসারের লক্ষ্যে ‘সারা বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মুফতি, মাশায়েখ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি’ শীর্ষক এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ও সিনিয় স্কলার্সের প্রধান শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শায়খ বলেছেন, সৌদি আরব সারা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলিমদের সেবায় অনন্য অবস্থান অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি ইসলামের উদার ও সহনশীল মনোভাব এবং সহাবস্থানের বার্তা বহন করে এবং ঘৃণা, সহিংসতা, উগ্রতা পরিহারের আহ্বান জানায়।
সৌদি আরবের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের আমন্ত্রিত আলেম ও মুফতিরা মক্কায় এসে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেনের জমিয়তে আহলে হাদিসের সভাপতি ড. শোয়াইব আহমেদ মিলিয়ো, অক্সফোর্ডের মেয়র ফায়াদ আহমদ, পাকিস্তানের জমিয়তে আহলে হাদিসের প্রধান শায়খ মুহাম্মদ সাজিদ মির, কলম্বিয়ার ইসলামিক সেন্টারে প্রধান শায়খ মুহাম্মদ রজব আবদুল মুতি আলি মাতার, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার গ্র্যান্ড মুফতি ড. হুসাইন কাভাজোভিক, মৌরতানিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আহমদ আল-মুরাবিত আল-শানকিতি, চাদের মুফতি আহমেদ আল-নুর আল-হালু, থাইল্যান্ডের ইসলামবিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ নুমসুক। গত শনিবার মক্কায় সম্মেলনস্থলে তাদের স্বাগত জানান ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রী শায়খ ড. আবদুল লতিফ।
সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ সূত্রে জানা যায়, সাতটি পর্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্য দিয়েছেন দেশটির ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রী শায়খ ড. আবদুল লতিফ আলে শায়খ। এরপর বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের প্রধানরা বক্তব্য প্রদান করেন। অতঃপর প্রথম দিনের মূল অধিবেশন শুরু হয়।
প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মদিনার অনুষদ সদস্য ও মদিনার ইফতা গভর্নর শায়খ ড. সালিহ বিন সাআদ আল-সুহাইমি। এতে ‘ইসলাম ও মুসলিমদের সেবা এবং ঐক্য জোরদারে বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ইফতা ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সিনিয়র স্কলার্সের সদস্য শায়খ ড. জিবরিল বিন মুহাম্মদ আল-বাসিলির সভাপতিত্বে ‘বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মাশায়েখদের সংযোগ : আশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা হয়। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইউনিভার্সিটির অনুষদ সদস্য শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন খালিদ আল-বাদাহের সভাপতিত্বে ‘সব জাতির মধ্যে সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ প্রসারে বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হয়।
এরপর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মদিনার শিক্ষক শায়খ ড. সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আল-রাহিলির সভাপতিত্বে ‘কোরআন ও সুন্নাহর যথার্থ অনুসরণ, মৌলিক পর্যালোচনা ও প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হয়। এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয় প্রথম দিনের চারটি অধিবেশন।
দ্বিতীয় দিনের (সোমবার) প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন হায়ার ইনস্টিটিউট অব জুডিশিয়ারির শিক্ষক শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন ফাহাদ আল-ফারিহ। এতে ‘কোরআন ও সুন্নাহে মধ্যপন্থা ও ন্যায়ানুবর্তিতা, মৌলিক পর্যালোচনা ও প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হবে।
এরপর শায়খ ড. মুহাম্মাদ বিন উমর বাজমুলের সভাপতিত্বে ‘চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হবে। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইউনিভার্সিটির অনুষদ সদস্য শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন ইবরাহিম আল-লুহাইদানের সভাপতিত্বে ‘নাস্তিকতা ও অবক্ষয় থেকে সমাজের সুরক্ষায় বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা হবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের সপ্তম ও সর্বশেষ অধিবেশন সম্পন্ন হবে।
সূত্র : সৌদি গেজেট