যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

লিবিয়ায় মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ভূমধ্য সাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে চাদ ও নাইজার, দক্ষিণ-পূর্বে সুদান এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া অবস্থিত। লিবিয়া আফ্রিকা মহাদেশের বৃহৎ দেশগুলোর একটি। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।

এর মোট আয়তন ছয় লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৩ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ৬৪ লাখ ২০ হাজার। দেশটির ৯৯.৭ শতাংশ মানুষ মুসলিম। ত্রিপোলি লিবিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে মিসরীয় শাসক দ্বিতীয় রামসিসের লিখিত রাষ্ট্রীয় নথিতে লিবিয়া নামক অঞ্চলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে প্রাচীনকালে লিবিয়া মিসরের শাসনাধীন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিকরা লিবিয়া দখল করে। খ্রিস্টপূর্ব ৭৪ খ্রিস্টাব্দে অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। মুসলিম সেনাপতিরা রোমানদের কাছ থেকেই লিবিয়া জয় করেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের দুই দশকের ভেতর লিবিয়ায় ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর শাসনামলে মিসর বিজয়ের মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকায় ইসলাম প্রচারের দ্বার উন্মুক্ত হয়। তবে উত্তর আফ্রিকায় মুসলিম অভিযান শুরু হয় উসমান (রা.)-এর শাসনামলে। লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অঞ্চল বিজয়ে নেতৃত্ব দেন তিন মুসলিম সেনাপতি। আমর ইবনুল আস (রা.) সিরেনাইকা, ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে আবদুল্লাহ বিন সাআদ (রা.) ত্রিপোলি এবং ৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে উকবা বিন নাফে (রা.) ফেজ জয়ের নেতৃত্ব দেন।

লিবিয়ায় মুসলিম বিজয় অভিযান শুরু হয়েছিল আবদুল্লাহ বিন সাআদ (রা.)-এর নেতৃত্বে। তিনি ২০ হাজার সেনার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে অভিযান শুরু করেন। যাদের ভেতর বহু সংখ্যক সাহাবি ছিলেন। যেমন আবদুল্লাহ বিন ওমর, আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের (রা.) প্রমুখ।

মুসলমানরা যখন লিবিয়ায় বিজয়াভিযান শুরু করে, তখন লিবিয়ায় বাইজান্টাইনদের শাসন চলছিল। সাধারণ মানুষ শাসকদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এমনকি লিবিয়ার একদল মানুষ বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মিসরে পালিয়ে এসেছিল। মিসরে প্রবেশের পর তারা সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইসলামী খেলাফতের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। তারা মিসরে আশ্রয় গ্রহণের পর আমর ইবনুল আস (রা.) মিসরের পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ২২ হিজরিতে তিনি উকবা বিন নাফে (রা.)-কে মরক্কো ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জয়ের জন্য পাঠান।

এই অঞ্চলে জাওয়াগা ও লিতওয়ানা সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করত। যারা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের শাসনে সন্তুষ্ট ছিল না। মুসলিম বাহিনী অভিযান শুরু করলে তারা মুসলমানদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। ফলে মুসলিমরা প্রায় বিনা যুদ্ধে সিরেনাইকাসহ বিস্তৃত অঞ্চল জয় করে। তারা মুসলমানদের সঙ্গে ‘নিরাপত্তা কর’ প্রদানের শর্তে সন্ধি করে। মুসলিম বাহিনীর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ত্রিপোলি। এই শহরে রোমান দুর্গ ছিল দুর্ভেদ্য। মুসলিম বাহিনী দীর্ঘ এক মাস অবস্থান করার পর সেখানে প্রবেশের পথ খুঁজে পায়।

মুসলিম বাহিনী লিবিয়া জয় করার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাতে তা মুসলমানদের অধীনে রয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে ৯৩৭ থেকে ৯৬২ হিজরি পর্যন্ত স্প্যানিশরা এবং ১৩২৯ থেকে ১৩৭১ হিজরি পর্যন্ত ইতালিয়ান লিবিয়া দখল করে রেখেছিল। স্প্যানিশদের কাছ থেকে উসমানীয়রা উদ্ধার করে এবং ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ হি.) পর্যন্ত শাসন করে। ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ার সাধারণ মানুষ সংগ্রাম গড়ে তোলে এবং ১৯৫১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

ওমর আল-মুখতার লিবিয়ার স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। স্বাধীনতার পর দেশটিতে রাজতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে একদল সেনা অফিসার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত গাদ্দাফি লিবিয়া শাসন করে। এরপর দেশটিতে শুরু হয় বিদেশি আগ্রাসন ও গৃহযুদ্ধ, যা এখনো চলছে।

সূত্র : মাউদু ডটকম