কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

পৃথিবীর বৃহৎ অসম্পূর্ণ মসজিদ আল হাসসান

মরক্কোর মিনারায় হাসসান পৃথিবীর বৃহৎ অসম্পূর্ণ মসজিদের স্মৃতিবাহক। বর্তমানে তা হাসসান টাওয়ার নামেও পরিচিত এবং একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সমাদৃত। তৃতীয় আলমোহাদ খলিফা আবু ইউসুফ ইয়াকুব আল মানসুর পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ জামে আল হাসসান তৈরির উদ্যোগ নেন। ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হলে মসজিদের নির্মাণকাজ থেকে যায়। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিনারের ৪৪ মিটার এবং মসজিদের ৩৪৮টি কলাম ও কিছু দেয়াল নির্মিত হয়। ফলে জামে আল হাসসান মিনারায় হাসসান নামে পরিচিতি লাভ করে।

১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মিনারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালে ইউনেসকো মিনারায় হাসসানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে। বর্তমানে অসম্পূর্ণ মিনার, মসজিদ ও পঞ্চম মুহাম্মদের সমাধি ক্ষেত্র নিয়ে বর্তমানে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।

১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইয়াকুব আল মানসুর স্পেনে আগ্রাসী খ্রিস্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় লাভ করেন। এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ও মিনার তৈরির উদ্যোগ নেন। মসজিদ নির্মাণের জন্য তিনি রাবাতের আলমোহাদ নগরকে বেছে নেন। কেননা যুদ্ধের সময় তা দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। মসজিদটি পরিপূর্ণভাবে নির্মিত হলে তা হতো মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। পরবর্তী সময়ে ইয়াকুব আল মানসুরের উত্তরসূরিরা আরো আধুনিক নগর সেইল নির্মাণ করে সেখানে চলে যান। ফলে মসজিদটি অসম্পূর্ণই থেকে যায়। 

আল হাসসান মসজিদ কমপ্লেক্স তার বিশাল আয়তনের জন্য সুপরিচিত। এটি ইরাকের সামারা মসজিদ ছাড়া মধ্যযুগের যেকোনো মসজিদের তুলনায় বড়। উত্তর-দক্ষিণে এর আয়তন ১৮০ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৪০ মিটার নির্ধারণ করা হয়। মসজিদটি একটি ঢালু জায়গায় স্থাপিত। তবে তা নির্মাণের জন্য একটি সমতল ভূমি তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের চতুষ্কোণ মিনারের পার্শ্বে ১৫ মিটার প্রশস্ত, যা মিহরাবের উত্তর পাশে স্থাপন করা হয়। মিহরাবের দুই পাশে ছিল দুটি ফায়ারপ্লেস বা অগ্নিচুল্লি।

আল হাসসান মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রবেশের জন্য উত্তর পাশে চারটি সিঁড়ি রয়েছে। আর উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তে যেতে স্থাপন করা হয়েছে আরো চারটি অতিরিক্ত সিঁড়ি। মসজিদে প্রবেশের প্রধান তোরণ এবং পূর্ব-পশ্চিমের বহির তোরণ দুটি ১০ মিটার চওড়া। মসজিদের কেন্দ্রীয় সাহানটির আয়তন দৈর্ঘ্যে ৭০ মিটার এবং প্রস্থে ৪২ মিটার। সাধারণ নিয়মের বাইরে মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে দুটি জানালা বিশেষ স্থান, যা মসজিদে আলো-বাতাসের প্রবেশ নিশ্চিত করেছিল। আল হাসসান মসজিদে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক প্রাঙ্গণ ও প্রবেশপথ ছিল।

যেহেতু মসজিদ নির্মাণের কাজ প্রাথমিক পর‌্যায়ে থেমে গিয়েছিল, তাই তাতে কারুকাজ দেখা যায় না। তবে অসম্পূর্ণ মিনারের চার পাশে সূক্ষ্ম কারুকাজ ও নকশা দেখা যায়। মিনারটি ৪৪ মিটার পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। সম্ভবত এটির উচ্চতা দ্বিগুণ হওয়ার কথা ছিল। অন্যান্য মাগরিবি মিনারের মতো মিনারাতে হাসসানে সিঁড়ির পরিবর্তে র‌্যাম্প এবং খিলানে জালিকাজের নকশা করা হয়েছে। মিনারাতে হাসসানের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে আল স্পেনের সেভিলে অবস্থিত মিনারায় গিরাল্ডের মিল রয়েছে। সেটিও ১১৭২ খ্রিস্টাব্দে ইয়াকুব আল মানসুর বিজয় স্মারক হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন।

সূত্র : আর্কিও ডটকম ও আর্কনেট ডটঅর্গ