
বহু স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিউনিসিয়ার ‘কায়রোয়ান মসজিদ’। পবিত্র কাবা শরিফ, মদিনার মসজিদে নববী এবং জেরুজালেমের আল-আকসার পরই এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় (মাগরেব) ইসলামের প্রথম মসজিদ হিসেবে এটি ব্যাপক প্রভাব ফেলে ছিল। নিম্নে ঐতিহাসিক এই মসজিদের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো—
প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
৬৭০ খ্রিস্টাব্দে উক্ববা ইবনে নাফি কায়রোয়ান মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। ৭০৩ সালে হাসান ইবনে নোমান মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন, যেখানে মূল মিহরাব অপরিবর্তিত থাকে। পরবর্তী ১০০ বছরে বিশাল খোলা চত্বর এবং মূল মিনার সংযোজন করা হয়। ৮৩৬ সালে মসজিদের প্রধান সংস্কার সম্পন্ন হয়।
নবম শতকে আঘলাবিদ শাসনামলে মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণ ঘটে। ১২শ শতকে হাফসিদের আমলে এবং ১৬১৮ সালে ফের আধুনিক করা হয়। ঊনবিংশ ও বিংশ শতকেও মসজিদের উন্নয়ন অব্যাহত ছিল।
গঠনশৈলী
স্থাপত্যশৈলীতে ইসলামী, রোমান ও বাইজান্টাইন রীতির সমন্বয় দেখা যায় এই মসজিদে। কায়রোয়ান মসজিদটি অনিয়মিত চতুর্ভুজ আকারের এবং দশ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এর ৩২ মিটার উঁচু মিনারটি পুরো শহরের সর্বোচ্চ স্থাপনা বলে বিবেচিত হয়। ১৭টি বিশাল পিলার মূল নামাজঘরের ভার বহন করে।
চত্বর ও মিনার
মসজিদের বাইরে অবস্থিত মার্বেল ও গ্রানাইটে নির্মিত খোলা চত্বরের আয়তন ৬৭ বাই ৫২ মিটার। মিনারটি ৩১.৫ মিটার উঁচু এবং ১০.৭ মিটার চওড়া। মসজিদের গম্বুজটি আফ্রিকায় স্থাপিত প্রথম গম্বুজগুলোর একটি।
মূল নামাজের জায়গা
খোলা চত্বরের দক্ষিণে রয়েছে কায়রোয়ান মসজিদের মূল নামাজের জায়গা। প্রায় ১৭টি দরজা এই মসজিদের মূল নামাজঘরে প্রবেশের জন্য সব সময় খোলা থাকে। পুরো জায়গায় মোট ১৭টি পিলার রয়েছে। মূল নামাজের জায়গা প্রস্থে ৭০.৬ মিটার এবং লম্বায় ৩৭.৫ মিটার। ১৭টি পিলার এই মসজিদকে আট ভাগে ভাগ করে। মাঝের অংশটি এখানে সবচেয়ে বড়। এতে কিবলার অবস্থান সঠিকভাবে রক্ষিত হয়েছে। পুরো মসজিদে মোট খাম্বা বা কলামের সংখ্যা ৫০০-এর বেশি এবং মূল মসজিদের মাঝেই আছে ৪১৪টি কলাম। তবে এই ১৭টি জোড় কলাম মূলত মসজিদের একেবারে কেন্দ্রে। মসজিদের এই ৪১৪টি কলাম তৈরিতে মূলত ব্যবহার করা হয় গ্রানাইট ও মার্বেল পাথর। অনেকের মতে, এই মসজিদের কলামের সংখ্যা এতটাই বেশি যে আসলে এখানে এসে যে কারো চোখে ধাঁধা লেগে যেতে পারে।
গোল্ডেন রেশিও
কায়রোয়ান মসজিদের নকশায় গোল্ডেন রেশিও (১:১.৬) অনুসরণ করা হয়েছে।
উপকরণ
প্রধানত মার্বেল, গ্রানাইট, কাঠ, ইট ও কাদামাটি ব্যবহার করে মসজিদটি নির্মিত। এর স্থাপত্যে জেরুজালেমের আল-আকসা এবং সিরিয়ার দামেস্ক মসজিদের প্রভাব স্পষ্ট।
মসজিদ প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
নবম ও একাদশ শতকে এই মসজিদটি ছিল ইসলামী চিন্তাধারার প্রাণকেন্দ্রের মতোই। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জন্ম নিয়েছে বহু ইসলামী চিন্তাবিদ। সে হিসেবে এই মসজিদকে ইমাম মালেক (রা.)-এর শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবেও দাবি করা হয়।
পর্যটন
মসজিদটি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা-রাত ২টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত খোলা থাকে। মুসলমানদের জন্য খোলা থাকলেও মসজিদের পবিত্রতার কথা বিবেচনা করে অন্যান্য ধর্মের পর্যটকরা বাইরের অংশ উপভোগ করতে পারেন।