কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

ইসলামে শিশু-কিশোরদের শিশু অধিকার

মানব জীবনের সূচনালগ্নে একজন মানুষকে শিশু বলা হয়। আমরা প্রত্যেকে এক সময় শিশু ছিলাম। শিশু-কিশোর বলতে আমরা বুঝি বয়সের স্বল্পতার কারণে যাদের দেহ, মন ও মগজ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি। আজকের শিশু আগামী প্রজন্মের নাগরিক। আর ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শৈশব-কৈশরই হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তিকাল। স্বচ্ছ মেধা, সুস্থ বুদ্ধি, সরল চিন্তা ও স্পষ্ট মনোযোগের কারণে শিশুরা সহজেই সবকিছু আয়ত্ত করতে পারে। সঙ্গত কারণেই তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতিও অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। আর শিশুকে আগামীর জন্য গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই তার ভবিষ্যৎ সুন্দর ও নিরাপদ করতে হবে। শিশুর ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্টক ও প্রোজ্জ্বল হবে তখনই, যখন তাকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হবে। প্রতিপালন করা হবে ইসলামের আদর্শ ও রূপরেখায়। শিশুকে শিশুকাল থেকেই তার মন-মানসিকতায় ইসলামের প্রতি পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও অগাধ ভালোবাসার বীজ রোপণ করতে হবে। তার আকিদা-বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, কেয়ামত, কবর, হাশর- এসবের প্রতি তাকে বিশ্বাসী করে তুলতে হবে। আদব-কায়দা, নম্রতা-ভদ্রতা ও সুন্দর শিষ্টাচারে প্রতিপালন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো পিতা তার সন্তানকে এর থেকে উত্তম উপঢৌকন প্রদান করতে পারেন না, তিনি তাকে যে উত্তম শিক্ষা প্রদান করেন। [তিরমিজি : হাদিস ১৯৫২]হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, শিশুর যখন কথা ফুটতে শুরু করবে তখন সর্বপ্রথম তাকে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ শিখাবে, আর মৃত্যুকালেও তাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকিন দিবে। কেননা যার প্রথম বাক্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং শেষ বাক্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে সে যদি হাজার বছরও বেঁচে থাকে তাহলে তাকে কোনো গোনাহ ও পাপের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। [বায়হাকি : হাদিস ৮২৮২]উপর্যুক্ত হাদিস দ্বারা শিশুকে ইসলামের শিক্ষা ও আদের্শে গড়ে তোলার গুরুত্ব প্রকটিত হয়। তাই একজন মুসলমান হিসেবে মা-বাবার নিজ শিশুদের এতটুকু পরিমাণ ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করা গুরু দায়িত্ব, যাতে সে ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান লাভ করতে পারে। যাতে সে আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ, হালাল-হারাম, ও জায়েজ-নাজায়েজ, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে চলতে পারে। কেননা শিশু বা সন্তানের ভালো কাজের একটা অংশ যেমন মা-বাবা পেয়ে থাকেন, তেমনি শিশু বা সন্তানের পদস্খলনের দায়ভার মা-বাবার কাঁধেই বর্তায়। হাদিসে এসেছে, জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে তারা বলবে, কিভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে। [ইবনে মাজাহ : হাদিস ৩৬৬০] তাই শিশুকে কিভাবে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায় সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

শিশুর সুন্দর নামকরণ:- শিশুকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে প্রথমে শিশুর সুন্দর ও ইসলামী নাম রাখতে হবে। ইসলামের মূল ভাষা আরবি। তাই শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে আরবি শব্দকে প্রাধান্য দেয়াই উত্তম। তাছাড়া শিশুর ভালো নাম চয়নের ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করা যায়। রাসুলুল্লাহ সা. সন্তান জন্মের সাত দিনের ভেতর তার নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানের নাম সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ সা. ইসলাম গ্রহণের পর অনেক সাহাবির নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। কেননা তাঁদের নাম ইসলামী ভাবাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল অথবা তাঁদের নাম অর্থপূর্ণ ছিল না। জয়নব রা. এর নাম বাররাহ পরিবর্তন করে জয়নব রাখেন। [সহিহ বুখারি : হাদিস ৬১৯২] সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো। [সুনানে আবি দাউদ : হাদিস ৪৯৪৮]
একইভাবে তিনি অর্থহীন, শ্রুতিকটু ও মন্দ অর্থের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। মহানবী সা. বলেন, তোমরা তোমাদের ছেলেদের নাম ইয়াসার, রাবাহ, নাজাহ ও আফলাহ রেখো না। [সহিহ মুসলিম : হাদিস ২১৩৬]আর শিশুর নাম হাদিসে বর্ণিত পন্থায় রাখলে সহজেই তাকে ইসলামের নানা বিষয় ও ইতিহাস-ঐতিহ্য শেখানো সম্ভব। ইসলামী নামের কারণে ইসলামের ইতিহাসটা তাকে শোনানো যাবে অনায়াসেই। বরং তখন তারা এ বিষয়টা আগ্রহভরে গ্রহণ করবে এবং সর্বদা তা মনে রাখবে। তবে শিশু ছেলেদের ক্ষেত্রে এমনসব নাম রাখা উত্তম যা আল্লাহর নামের সাথে সম্বন্ধীয়। তাছাড়া নবী ও বা সাহাবীদের নাম রাখাও ভালো। আর শিশু মেয়েদের ক্ষেত্রে মহিলা সাহাবীদের নাম উত্তম। সুতরাং শিশুর ইসলামের শিক্ষার প্রথম ধাপ অর্থবোধক ও সুন্দর নাম দিয়ে শুরু হোক।

আদর্শ পরিবার:- শিশুকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে পরিবারকেও ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। হতে হবে আদর্শ পরিবার। কেননা পরিবার হলো শিশুর প্রথম প্রতিষ্ঠান। আর মায়ের কোল হলো শিশুর সর্বোত্তম শিক্ষালয়। মা-বাবাই শিশুর প্রথম আদর্শ শিক্ষক। পরিবার বা মা-বাবার কাছ থেকেই শিশু ভালো-মন্দ দুটোই শিখে থাকে। তাই পরিবারে ইসলামের চর্চা হলে শিশুও ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে। হয়ে উঠবে আদর্শ নাগরিক। একথা সত্য যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগেও যেমন নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প খাবার কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, তেমনি সুনাগরিক তৈরিতে পরিবারের বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান আজো গড়ে ওঠেনি। তাই ইসলাম পারিবারিক পরিবেশে ইসলামের বিষয়-আশয় চর্চার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সুতরাং শিশুকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে পরিবারের সদস্য কিংবা মা-বাবাকেই যত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানই ফিতরাত [ইসলাম] এর ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। [সহিহ বুখারি : হাদিস ১৩৫৯]

পরিশেষে, আমরা আমাদের সোনামণিদের সাথে আন্তরিকভাবে মিশে পবিত্র মন নিয়ে তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শ হাতে-কলমে জীবন গড়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ দেই। যাতে করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, নৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিকভাবে সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করার মানসিকতা নিয়ে শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভার দীপ্ত প্রভাব জাগ্রত করি। জাতির কাছে তাদের এ অধিকারগুচ্ছ তুলে ধরে ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম করি।