কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

আল্লাহর সাথে মানবজাতির অঙ্গীকার

পৃথিবীর সর্বকালের সব মানবকে আদম আ:-এর জীবদ্দশায় তার পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। ‘স্মরণ করো, তোমার (রাসূল সা:) প্রতিপালক (আল্লাহ) আদম আ:-এর পৃষ্ঠদেশ হতে তার সব বংশধরকে বের করলেন আর তাদের নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করলেন এবং প্রশ্ন করলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক ও প্রভু নই? সব মানব জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ’ (আপনি আমাদের প্রভু) তা ছাড়া অবশ্যই আমরা সাক্ষী থাকলাম। এটি এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম।’ (সূরা আল আরাফ-১৭২) 

আল্লাহর সাথে আমরা যে অঙ্গীকার করে আসছি অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালক, আমরা যেন তা সদা সর্বদা পালন করতে থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিপালন করছেন প্রতিনিয়ত আমাদের পুরো জীবনে। তাই তিনি উপরোক্ত প্রশ্নে (সূরা আল আরাফ-১৭২) ‘রব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। প্রতিপালন শব্দটির সাথে আমরা বাস্তবিক জ্ঞানসহ পরিচিত। প্রত্যেক পিতামাতা তাদের সন্তানদের প্রতিপালক কমপক্ষে তারা স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত। আমরা আমাদের সন্তানদের প্রতিপালক; পক্ষান্তরে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাবিশের প্রতিপালক। একটু চিন্তা করি আল্লাহর প্রতিপালনের ব্যাপকতা, বিশালতা, সীমাহীনতা। 

পিতামাতা সন্তানদের প্রতিপালনে ব্যর্থ হতে পারে বা তাতে গুণগত তারতম্যও হতে পারে, কিন্তু আল্লাহর প্রতিপালন পরিপূর্ণ, যথার্থ ও ত্রুটিমুক্ত, যেমনি ত্রুটিমুক্ত আল্লাহর মহাবিশ^ সৃষ্টি। আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন- ‘তিনি সপ্তাকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিতে কোনো অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোনো ত্রুটি দেখতে পাবে না।’ (সূরা আল মুলক : ৩-৪)
আল্লাহর সাথে আমাদের অঙ্গীকার আদম আ:-এর জীবদ্দশায়ই শেষ নয়; বরং এ জগতেও প্রতিদিন আমরা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করছি, বিশেষ করে যারা নিয়মিত সালাত আদায় করি। সালাত শুরুর আগে মুসল্লিরা বলেন, ‘আমি মুখো হলাম একনিষ্ঠভাবে তাঁর প্রতি যিনি সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ ও পৃথিবী এবং আমি মুশরিক নই।’ (সূরা আল আনআম-৭৯) কত বড় অঙ্গীকার একনিষ্ঠতার এবং শিরক না করার! তা ছাড়া আমরা আরো অঙ্গীকার করি- ‘একমাত্র তোমারই দাসত্ব করি অন্য কারো নয়। একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, অন্য কারো কাছে নয়।’ (সূরা ফাতিহা-৫) 

চিন্তা করুন, কত বড় বড় অঙ্গীকার আমরা আল্লাহর সাথে করছি! কিন্তু বাস্তবে আমরা কি তা পালন করতে পারছি? দুনিয়ায় সম্মানের জন্য সালাত আদায়, লোকদেখানোর জন্য সালাত আদায়, নামাজি লোক নামে পরিচিত হওয়ার জন্য সালাত আদায়, তা কি একমাত্র আল্লাহর জন্যই সালাত বা দাসত্ব হবে? অবশ্যই নয়। তাহলে আমি কি আমার অঙ্গীকার রক্ষা করলাম, না ভঙ্গ করলাম? অবশ্যই ভঙ্গ করেছি।
যদিও আমরা এক বাক্যে সমস্বরে সবাই স্বীকার করেছিলাম এবং সাক্ষ্য দিয়েছিলাম- ‘হ্যাঁ, অবশ্যই (হে আল্লাহ!) আপনি আমাদের প্রতিপালক ও প্রভু’, কিন্তু আজ আমাদের অধিকাংশই তা ভুলে গেছে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ এ অশান্ত ও বসবাসের অযোগ্য পৃথিবী আল্লাহর বিধানাবলি ভুলে যাওয়ার কারণে, যা আমাদের সৃষ্টিকর্তার অত্যন্ত অবাঞ্ছিত। আল্লাহ পছন্দ করেছিলেন শান্তিময় পৃথিবী তাঁর বিধানাবলি পালনের মাধ্যমে। সে শান্তিময় ও সুশৃঙ্খল পৃথিবী অবশ্যই আমরা পেতাম, যদি আমরা আমাদের উপরোক্ত আল্লাহর সাথে করা অঙ্গীকার রক্ষা করতাম।

মুমিন মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই অজান্তে শিরক নামক অমার্জনীয় পাপ করে ফেলি যথা- ওলি-আউলিয়াদের মাজারে সিজদা করা, তাদের মাজারে সাহায্য চাওয়া, পীর সাহেবকে সিজদা করা লাইন ধরে, যা আমি সচক্ষে দেখেছি। আমরা কথা বলায় শিরক করছি অহরহ। আমরা বলি- ‘মরেই গিয়েছিলাম, ডাক্তারটা এত ভালো যে তার চিকিৎসায় আমি মরা মানুষটা বেঁচে গেলাম’। যে ডাক্তার নিজেকে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারে না, সে মরণাপন্ন রোগীকে কি করে বাঁচাবে? ডাক্তার রোগমুক্তির অন্যতম মাধ্যম, কারণ ওষুধও রোগ মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। রোগ মুক্তকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, অন্য কেউ নয়। আল্লাহর বাণী- ‘আমি যখন রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই (আল্লাহ) আমাকে রোগ মুক্ত করেন।’ (সূরা আশ শুয়ারা-৮০)

কথায় বা কাজে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক বা অংশীদার দাঁড় করানো অমার্জনীয় অপরাধ। আল্লাহর বাণী- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করেন না। তবে এটি ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করে, সে এক মহাপাপ করে।’ (সূরা আন নিসা-৪৮)
আসুন, আমরা অসাধারণ সাবধান হই শিরক নামক পাপ করা হতে, তেমনি আমরা সাবধান হই আল্লাহর সাথে করা বিভিন্ন অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হতে। মহান আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, রোগ মুক্তকারী, অফুরন্ত নিয়ামতদাতা, অভাবমোচনকারী, ইজ্জতদাতা, সম্মানদাতা, ক্ষমতাদাতা, নিরাপত্তাদাতা, মৃত্যুদাতা প্রভৃতি এবং তিনি পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আমাদেরই জন্য। এহেন সীমাহীন ক্ষমতাধর আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করা কোন স্তরের বিশ্বাসঘাতকতা তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের দায়িত্ব সদা সর্বদা আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত, যা তিনি দয়া করে আমাদেরকে দান করেছেন, তার শুকরিয়া আদায় করা তাঁরই আদেশ পালনার্থে। আল্লাহর বাণী- ‘হে গোলামগণ! আমার শুকরিয়া আদায় করো বা কৃতজ্ঞ হও। সাবধান! অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা আল বাকারা-১৫২)