ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়াআল্লাহর জিকির মুমিনকে শক্তিশালী করেপবিত্র কাবাঘরে ১২০ কেজি স্বর্ণের নতুন গিলাফএ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদজুলুমকারীদের জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে
No icon

প্রাণিবিদ্যায় মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাহিজের গবেষণা

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জেনি মিলার মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাহিজকে নিয়ে একটি নতুন ভাষ্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেয়ার অ্যান্ড মিডল ইস্টার্ন সিভিলাইজেশন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। মিলার আল জাহিজের দ্য বুক অব অ্যানিমেলস (কিতাবুল হাইওয়ান) নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তিনি প্রাচীন এই গ্রন্থ সম্পর্কে নতুন ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, আল জাহিজ প্রাণিবিদ্যায় নতুন অনেক চিন্তা ও ধারণার জন্ম দেন। যেমন মানুষ ও অন্য প্রাণির মধ্যে যে আচরণগত অনেক মিল আছে এবং তারা সব ক্ষেত্রে পরস্পরের শত্রু নয়—মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আল জাহিজ এ ধারণা প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন। ইবনে জাহিজের পুরো নাম আবু উসমান আমর বিন বাহার আল-কিনানি। তিনি ছিলেন নবম শতকের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও পণ্ডিত। তবে তিনি নিজেকে ধর্মতাত্ত্বিক ও প্রকৃতি বিজ্ঞানী বলে পরিচয় দিতেন।

আল জাহিজের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে মিলার বলেন, তিনি আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে জানা ও বোঝার পদ্ধতিগুলো একত্র করতে চাইতেন। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার মতো আমাদের সহজাত প্রতিক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করতেন। তবে কখনো কখনো তাঁকে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের বিপরীতে বিনোদনমূলক সাহিত্যের রচয়িতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়—আমার দৃষ্টিতে এটা ভুল। কেননা নবম শতাব্দীতে ধর্মীয় সাহিত্য ও বিনোদনমূলক সাহিত্যের মধ্যে সীমারেখাটা এত স্পষ্ট ছিল না।

তিনি আরো বলেন, কিতাবুল হাইওয়ান লেখা হয়েছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যদিও বইটি অ্যারিস্টটলের জীববিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত। ইবনে জাহিজ মানুষের বিভিন্ন উত্তেজক ও স্পর্শকাতর আচরণ বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। যেমন তিনি কবুতরের ওপর পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ হলো প্রাণিজগতে যৌনতার নানা প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। রয়েছে আধিপত্য বিস্তারের বহু রকম পদ্ধতি। ঠিক যেমনটি মানবসমাজেও রয়েছে। বইটির বৃহদাংশই সেসব মানুষের বিরুদ্ধে, যারা মানুষকে প্রাণিজগৎ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং অন্য প্রাণীকে মানুষের শত্রু মনে করে।

আল জাহিজ যদিও অন্য বুদ্ধিজীবীদের মতো অভিজাত শ্রেণির লোক ছিলেন, তবে তিনি মানুষ ও সমাজের সঙ্গে মিশতেন। সব কিছু কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করতেন। এ জন্য প্রাণী ও সমাজ সম্পর্কে তাঁর ধারণা অনেকটাই বাস্তবসম্মত। ৮০০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা কাগজ তৈরির প্রযুক্তি হাতে পেলে আল জাহিজ সাদরে গ্রহণ করেন এবং কাগজ তৈরি, এর অনুশীলন, সংরক্ষণ, তথ্য ও তত্ত্ব বিষয়ে দীর্ঘ বই রচনা করেন।

গবেষক মিলারের মতে, কিতাবুল হাইওয়ানে ধর্ম, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটেছে। এ জন্য একদিকে দেখা যাচ্ছে তিনি সৃষ্টিজগতে আল্লাহর বিস্ময়কর ক্ষমতা চিত্রিত করছেন, অন্যদিকে গোবর পোকার বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করছেন। আর তাতে উদ্ধৃত করছেন কবিতা। ইবনে জাহিজ মনে করতেন, মানুষের আচার-আচরণ ও সৃষ্টিজগতের প্রকৃতি বোঝার জন্য প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য, প্রাকৃতিক নিয়ম ও যৌক্তিক বিতর্ক অপরিহার্য। এর মাধ্যমেই সৃষ্টিজগতে মানুষের প্রকৃত অবস্থান ও ভূমিকা জানা যাবে। ইবনে জাহিজের রচনাবলিকে সাহিত্যের মৌলিক কাজের অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়।

১০০১ ইনভেনশন অবলম্বনে