মুমিনের আত্মমর্যাদাবোধ তাকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। আত্মমর্যাদা বজায় রেখে চলা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। মুমিনের জন্য এমন কোনো কাজে আত্মনিয়োগ করা উচিত নয়, যা তার সম্মানহানি করতে পারে, তাকে লাঞ্ছনার সম্মুখীন করতে পারে। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতকে এ ব্যাপারে কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হুজাইফা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো মুমিনের জন্য উচিত হবে না নিজেকে কোনোভাবে লাঞ্ছিত করা। সাহাবায়ে কিরাম বলেন, (হে আল্লাহর রাসুল) কিভাবে কেউ নিজেকে লাঞ্ছিত করে? তিনি বলেন, কেউ নিজ সাধ্যাতীত কোনো বিপদ স্বেচ্ছায় নিজ কাঁধে উঠিয়ে নেওয়া।(তিরমিজি, হাদিস : ২২৫৪)।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহজ ধর্ম। ইসলাম মানুষের ওপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় না, যা তার সাধ্যের বাইরে। এই হাদিসেও সেই কথার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে, কোনো ব্যক্তির জন্য এমন কোনো দায়িত্ব মাথায় তুলে নেওয়া জায়েজ নেই, যা সে পূরণ করতে না পেরে অপমানিত হবে। যেমন বিপদের দোয়া করা, যা সে বরদাশত করতে পারবে না। অথবা এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া, যা তার অপমানের কারণ হবে।
এমনকি সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বারণেরও কয়েকটি স্তর রয়েছে। ব্যক্তি নিজের সামাজিক অবস্থান ও ক্ষমতা বিবেচনায় তার স্তর অনুযায়ী সৎকাজে আদেশ বা অসৎকাজে বাধা প্রদানের দায়িত্ব পালন করবে। তা করতে গিয়ে নিজের পরিধির বাইরে গিয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা তাকে অপমানিত করতে পারে। তবে সর্বাবস্থায় অসৎকাজকে মনে মনে ঘৃণা করতে হবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অসৎকাজে বাধা না দিলে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহকে এর জবাব অবশ্যই দিতে হবে। আর কেউ যদি কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়ে তা না করতে পারে, কিন্তু ঈমানের চেতনায় সেই কাজকে অপছন্দ করে, তাহলে মহান আল্লাহই তাকে কিয়ামতের দিন সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পথ খুলে দেবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন অবশ্যই বান্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, শেষে বলবেন, তুমি অন্যায় কাজ হতে দেখে তা প্রতিহত করোনি কেন? (সে জবাব দানে অসমর্থ হলে) আল্লাহ তাকে তার যথাযথ উত্তর শিখিয়ে দেবেন। তখন বান্দা বলবে, হে প্রভু, আমি তোমার রহমতের প্রত্যাশী হয়ে লোকেদের তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৭)