যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

নারীকে যেসব উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

নারী ও পুরুষ অধিকার নিশ্চিত করতে ইসলামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। নারীরা মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয় বহন করে। ইসলামই নারীকে দেয় সর্বোচ্চ মর্যাদা ও অধিকার। ইসলাম নারীকে যেসব উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো-

নারীর মর্যাদা

নারীরা একে অপরের সাহায্যকারী বন্ধু হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া, অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা, বার্ষিক হজ পালন, জাকাত দেওয়াসহ ইবাদত-বন্দেগি পালন ও সামাজিক প্রায় সব কাজেই পুরুষের মতো নারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা বাধ্যতামূলক। এসব কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীরা তাদের নৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে এবং আল্লাহমুখী আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বরেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

হে নবি! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)

কুরআন-সুন্নায় নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সমাজে যখন নারীর অবস্থান ছিল অমানবিক; তখন থেকেই ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়নের জন্য নজীরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতনের কিছু দিক তুলে ধরে তা প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো-

নারী সৃষ্টিতে সেরা

মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা দিয়েছৈ ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম জন্মগতভাবে মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। কেননা ইসলামের বিধিবিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য সমানভাবে শাশ্বত ও চিরন্তন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো নারীকে শুধু নারী হয়ে জন্মানোর কারণে পুরুষের তুলনায় হীন ও নীচ মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরাও মহান আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি।

২. ঈমান-আমলে নারীর মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমান-আমলে নারী-পুরুষের মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে বলে মনে করাও অজ্ঞতা। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মর্যাদা-লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব-নীচতার মাপকাঠি হচ্ছে- তাকওয়া তথা পরহেজগারী এবং চরিত্র ও নৈতিকতা। তাকওয়া ও চরিত্রের মাপকাঠীতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِن فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَة وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক; আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব; যা তারা করত। (সুরা নাহল : আয়াত ৯৭) فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لاَ أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ

অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৫)

৩ সমাজ বিনির্মাণে নারী

জীবনের সবরকম কর্ম তৎপরতা ও উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সব সময় একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। আল্লাহ তাআলা এক্ষেত্রেও উভয়কে সম মর্যাদা দান করেছেন। তাদের পারস্পরিক মিলে জীবনের কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। উভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তামাদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটেছে। আল্লাহ বলেন-

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭১)

৪ নারীকে দোষারোপ থেকে মুক্তি

গোটা দুনিয়া যখন নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো তখন ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ - أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاء عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তা ন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। (সুরা শুরা : আয়াত ৪৯-৫০)

এ কারণে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রাণ খুলে মেলামেশা করতেও ভয় পেতাম; এ ভেবে যে, আমাদের সম্পর্কে কোনো আয়াত যেন নাজিল না হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর আমরা প্রাণ খুলে তাদের সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম। (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা নারীর প্রতি কোমল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাঁচের সঙ্গে তুলনা করতেন। তাদের প্রতি সদয় হওয়ার তাগিদ দিতেন। তিনি বলেন-

কাঁচগুলোকে (স্ত্রীদেরকে) একটু দেখে শুনে যত্নের সঙ্গে নিয়ে যাও। (মুসলিম)

আধুনিক সমাজেও নারীর প্রতিবন্ধকতা

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার নামে নারীকে অগ্রসর ভাবা হলেও নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে; আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বহু ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিত। যেসব ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা নারীর পাশে দাঁড়াতে পারেনি; যে কারণে নারীরা-

১. নিরাপদে ঘরতে বের হতে পারে না।

২. পাচারের শিকার হয়।

৩. জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

৪. অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হয়।

৫. গর্ভবতী নারীও স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও ননদদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় না।

৬. যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

৭. স্বামী ও পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

৮. অধিকাংশ নারীই পায় না মোহরানার অধিকার।

৯. শিশুকন্যাদের ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করা হয়।

১০. নারীদের শ্রমের সঠিক মূল্যয়ন করা হয় না।

১১. আধুনিক সভ্যতায় উচ্চ মর্যাদার নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১২. এমনকি ধর্মীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় নারীকে।

১৩. তালাকের অপব্যবহার হয় অহরহ।

নারী এসব নির্যাতন রোধে ইসলামে কী বলে? ইসলাম নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করেছে। এমনকি ইসলামি শরিয়াতের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে পুরুষের মতো শ্রম-সাধনা করায় নারীর সমান অংশগ্রহণের অনুমতিও রয়েছে।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, নারী প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সব হক যথাযথভাবে আদায় করা। নারীকে মর্যাদা দেওয়া। নারীর মর্যাদা রক্ষায় কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিশ্বজুড়ে সবাইকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।