পবিত্র কাবাঘরের বাইরে যেমন গিলাফ আছে, তেমনি এর ভেতরেও গিলাফ আছে। কাবাঘরের ভেতরের ওপরের দিকের চারপাশে তা লাগানো হয়। বাইরের গিলাফ কালো রঙের হলেও ভেতরের গিলাফের রং সবুজ। প্রতিবছর বাইরের গিলাফ বদলানোর দৃশ্য সবার দৃষ্টিগোচর হলেও ভেতরের গিলাফ বদলানোর দৃশ্য অগোচরেই থেকে যায়।
গিলাফে আরবি লিখনশৈলী সুলুস পদ্ধতিতে কোরআনের আয়াত, আল্লাহর গুণবাচক নাম ও কালেমা লেখা রয়েছে। তা হলো, সুরা আলে-ইমরানের ৯৬ নং আয়াত, ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। ঠিক কখন থেকে ভেতরে গিলাফ লাগানোর প্রথা শুরু হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তবে ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে এ কথা বলা যায়, আব্বাসি যুগের দ্বিতীয় পর্যায়ে (২৩২-৩৩৪ হিজরি) কাবাঘরের ভেতরে গিলাফ ছিল।
বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে জুবাইর (রহ.) ৫৭৯ হিজরি সালে মক্কা ভ্রমণের বর্ণনাকালে কাবাঘরের ভেতরের পর্দা লাগানোর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, পবিত্র ঘরের ছাদে রেশমের তৈরি রঙিন কাপড় দিয়ে মোড়ানো ছিল। ঐতিহাসিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম কাবাঘরের ভেতরের পর্দার কথা উল্লেখ করেছেন বলে মনে করা হয়। তা ছাড়া ৬৫৯ হিজরিতে ইয়েমেনের রাজা বাদশাহ মুজাফফর কর্তৃক পবিত্র কাবাঘরের ভেতরে গিলাফ লাগানোর কথা জানা যায়। ৭৬১ হিজরিতে বাদশাহ আন-নাসির হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন কালাউন কাবার গিলাফ পরিয়েছেন। এরপর ৮২৬ হিজরিতে সুলতান আল-আশরাফ বারসাবাই গিলাফ পরিয়েছেন। উসমানীয় সময়ে সুলতান সুলাইমান কাবাঘরের ভেতরের জন্য প্রতি ১৫ বছরে একবার গিলাফ প্রদান করতেন। উসমানীয় সুলতানদের মধ্যে যাঁরাই ক্ষমতায় আসতেন তাঁরাই কাবার ভেতরের জন্য গিলাফ দেওয়ার রীতি অনুসরণ করতেন। ১১১৮ হিজরি থেকে মিসরে কাবাঘরের ভেতরে ও বাইরের জন্য দুটি গিলাফ সেলাইয়ের কাজ শুরু হয়। এদিকে সুলতান তৃতীয় আহমদ বিন মুহাম্মদের নির্দেশে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কাবার ভেতরের জন্য গিলাফ তৈরি হয়। ১২৭৭ হিজরিতে সুলতান আবদুল আজিজ বিন সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ভেতরের গিলাফ প্রেরণ করেন। হিজাজ অঞ্চলে বাদশাহ আবদুল আজিজ আলে সৌদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত তা বহাল থাকে।
১৩৫৫ হিজরিতে বিহারের রাজার পাঠানো গিলাফ লাগিয়ে উসমানীয়দের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। ১৩৬৩ হিজরিতে নতুন গিলাফ তৈরি করা হয়। অতঃপর বাদশাহ খালিদ বিন আবদুল আজিজ কাবাঘরের ভেতরের জন্য নতুন গিলাফ তৈরির নির্দেশ দেন। ১৪০৩ হিজরিতে বাদশাহ ফাহাদের সময়ে মক্কার উম্মুল জুদ এলাকায় গিলাফ তৈরির কারখানায় তা তৈরি করা হয়। ১৪০৮ হিজরিতে মক্কায় তৈরি নতুন গিলাফ কাবাঘরে লাগানো হয়। অবশেষে বাদশাহ ফাহাদের সময়ে পবিত্র কাবা চত্বরের ব্যাপক সংস্কার হয়। ১৪১৭ হিজরিতে পুরনো গিলাফ পরিবর্তন করে নতুন গিলাফ পরানো হয়। নানা রঙের রেশম দিয়ে গিলাফ তৈরির প্রথা থাকলেও বেশির ভাগ সময় তা লাল রঙের রেশম থেকে তৈরি করা হতো। বাদশাহ খালিদের সময়ে কাবাঘরের ভেতরের গিলাফ লাল রঙের বদলে সবুজ রং করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বাদশাহ ফাহাদের সময় থেকে অদ্যাবধি কাবার ভেতরের গিলাফের রং সবুজ রয়েছে।
তথ্যসূত্র : আল-ইয়াওম