মানুষ নিজ গৃহে বিশ্রাম নেয়। রাতে ঘুমাতে যায়। এ ছাড়া ঘরের ভেতরে থাকে নারীরা। যাদের সামনে যাওয়া পরপুরুষের জন্য ইসলামসম্মত নয়। তাই অন্য কারো ঘরে প্রবেশের আগে সেই ঘরের মালিকের অনুমতি অবশ্যই কাম্য। এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা হলো—
অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ করো এবং তার বাসিন্দাদের সালাম দাও। এ-ই তোমাদের জন্য উত্তম। (এ নির্দেশ দেওয়া হলো), যাতে তোমরা স্মরণ রাখো। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৭)
কিভাবে অনুমতি চাইবে : অনুমতি চাওয়ার আগে সালাম দেওয়া। তারপর অনুমতি চাওয়া। সাহাবি ও তাবেঈনদের আমলও অনুরূপ এবং এটাই সুন্নতসম্মত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১০; আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৭৭)
নাম-পরিচয় উল্লেখ করা : কণ্ঠস্বর শুনে অনেক সময় ঘরের ভেতর থেকে চেনা যায় কে এসেছে বা আসতে অনুমতি চাচ্ছে। আবার কখনো কারো কারো ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হয়, কে অনুমতি চাচ্ছে? কখনো এমনটা হলে অনুমতি প্রার্থীর কর্তব্য হলো, সরাসরি নিজের নাম বলে দেওয়া বা যে নামে তাকে চেনে সেটা উল্লেখ করা। জাবির (রা.) বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম এবং দরজায় আঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। তখন তিনি বলেন, আমি-আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৫০)
কোথায় দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইবে : কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে গেলে সরাসরি ঘরের দরজা বরাবর না দাঁড়িয়ে বরং দরজার ডান বা বাম পাশে দাঁড়ানো। যাতে ঘরের ভেতর দৃষ্টি পড়ে না যায়। হুজাইল (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার এক ব্যক্তি অর্থাৎ সাদ (রা.) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরের দরজা বরাবর মুখ করে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, দরজার ডান অথবা বাম দিকে সরে দাঁড়াও। কেননা চোখের দৃষ্টির কারণেই অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৭৪)
ঘরের ভেতরে দৃষ্টি না দেওয়া : মালিকের অনুমতি ছাড়া ঘরের ভেতরে দৃষ্টি দেওয়া অতি নিন্দনীয় ও কুরুচিপূর্ণ কাজ। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো এক কক্ষে উঁকি দিয়ে তাকাল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটা ‘মিদরা’ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলেন, যদি আমি জানতাম যে তুমি উঁকি দেবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়া হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪১)
অনুমতি না পেলে ফিরে আসা : অনেক সময় বাসায় মানুষ থাকে না। আবার কখনো মানুষ থাকে তবে পুরুষ নয়, ছোট বাচ্চা বা নারী। এমনও হতে পারে যে যে অনুমতি চাচ্ছে সে ওই নারীর নন-মাহরাম । যদ্দরুন ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারছে না। অথবা ঘরের মালিক ব্যক্তিগত কোনো কাজে ব্যস্ত বা সে চাচ্ছে না এ মুহূর্তে কেউ তার ঘরে প্রবেশ করুক। এ অবস্থায় উচিত হলো তিনবার অনুমতি চেয়ে প্রতি-উত্তর না পেলে ফিরে আসা। আর যদি ভেতর থেকে সরাসরি ফিরে যেতে বলে তাহলে তো কথাই নেই। এ সম্পর্কে কোরআনের নির্দেশ দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি তাতে কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ না তোমাদের অনুমতি দেওয়া হয়। আর যদি তোমাদের বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যেয়ো। এটি তোমাদের জন্য খুবই পরিচ্ছন্ন পদ্ধতি বা পন্থা। আর তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৮)