মানুষের জীবনোপকরণ ‘রিজক’ জীবিকার জোগান হলো ফসলি মাঠ। মাটির অতলান্ত গভীরে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তোমাদের জন্য মাটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এর দিক দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেওয়া রিজিক আহার করো।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১৫)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমি তো অঝর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাক-সবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফল-ফলাদি ও ঘাস...।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)
মানবীয় পরিশ্রমেই যে খাদ্য উৎপাদন হয় এমন নয়, বরং বীজ হতে চারা, ভূগর্ভস্থ পানির সেচ, শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ- সব কিছু হয় মহান আল্লাহর কুদরতি হুকুমে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন করো সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা থেকে উৎপন্ন করো না, আমিই উৎপন্নকারী? ইচ্ছা করলে, আমি উহা খরকুটা করে দিতে পারি...।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৬৩-৬৫)
পবিত্র কোরআনে তরুলতা ও উদ্যানের উল্লেখ এবং এ গুলোর নানাবিধ উপকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, ‘যিনি বিভিন্ন ধরনের লতাবিশিষ্ট ও কাণ্ডের ওপর দণ্ডায়মানবিশিষ্ট বাগান খেজুরগাছ ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের উদ্ভিদ, ভেষজ, ফল-ফলাদি, জাইতুন ও আনারের গাছ সৃষ্টি করেছেন...।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)
বাঙালির ফসলি মাঠ হলো, রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত ‘খাদ্যভাণ্ডার’। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, তোমরা জমিনের প্রচ্ছন্ন লুকায়িত ভাণ্ডারে খাদ্য অন্বেষণ করো। (তিরমিজি)
হেমন্তকালে (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরে জাগে নবান্নের উল্লাস। কিষান বধূয়া গুড়, নারিকেল, দুধ, কলা, নতুন চাল ও নানা দেশীয় উপকরণের মিশ্রণে তৈরি করেন ক্ষীর-পায়েস আর রংঢঙের বারোয়ারি পিঠা। পাড়া-পড়শির হৈ-হুল্লোড়ের এক সরল আতিথ্যে দেখা যায় লোকায়ত মুসলিম ঐতিহ্য। তবে আবহমান এই রূপ-রস-গন্ধ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিকতা ও স্বার্থপরতার কৌশলে। অথচ ইসলামী অনুশাসন মেনে অগ্রহায়ণের ‘দাও-মাড়ির (ফসল কাটা)’ উৎসব পেতে পারত ইবাদতের আবহ। মহান আল্লাহ (অন্য একটি বিশেষ প্রসঙ্গে) বলেন, ‘হে রাসুল বলুন, যখন আল্লাহর অনুগ্রহ, রহমত, সম্মান ও করুণা অর্জিত হয়, তখন তারা যেন আনন্দোৎসব করে।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৮)
ইবাদতের মাধ্যম ও পারলৌকিক মুক্তির উপায় হতে পারে বাঙালির সোনাছোঁয়া ফসলও। কেননা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ‘উশর’ (মুসলমানদের ফসলি কর) একটি বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন ফসল পাকে, তখন তা খাও এবং ফসল কাটার দিন তা থেকে আল্লাহর হক (দুস্থজনের হক) আদায় করো।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)
তিনি আরো বলেন, ‘যা আমি তোমাদের জমি থেকে উৎপাদন করেছি তা থেকে পবিত্র (উত্তম) অংশ খরচ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৬৭)