নেক আমল করার ক্ষেত্রে ইসলাম মুমিনদের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য ধর্মাবলম্বীদের ভালো কাজ থেকে মুসলমানের ভালো কাজকে পৃথক করে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো মুসলিম সমাজে তুলনামূলক বেশি ধর্মচর্চা হওয়ার অনুপ্রেরণা ও কারণও বটে। তাহলো সামগ্রিকতা, বৈচিত্র্য, ধারাবাহিকতা, অনুপ্রেরণা ও নিষ্ঠা। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
১. সামগ্রিকতা : মুমিন নেক আমলের ক্ষেত্রে সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে। সে প্রান্তিক চিন্তা থেকে দূরে থাকে। যেমন- মানুষের সাহায্য করা। মুমিন তার কাছের ও দূরের, বন্ধু ও শত্রু, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, মানুষ ও অন্য জীব কাউকে বঞ্চিত করে না। এটাই পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, ‘লোকে কী ব্যয় করবে সে সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে। বলো, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছু তোমরা করো না কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৫)
একইভাবে সব মানুষের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করবে না। আর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
২. বৈচিত্র্য : ইসলাম ইবাদত তথা নেক আমলকে কিছু প্রথাসর্বস্ব আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ করেনি, বরং মানুষের সমগ্র জীবনে তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইসলাম এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে ইবাদতের গণ্ডিভুক্ত করেছে, যা অন্য কোনো ধর্মে দেখা যায় না। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে, তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার জন্য তার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা আবশ্যক। (বুখারি : ৬২২৬)
অন্য হাদিসে তিনি বলেন, উত্তম কথা দানতুল্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)
তিনি আরো বলেন, হাসিমুখে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ সদকাতুল্য। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯১১)
৩. ধারাবাহিকতা : মুসলমান তাঁর আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। কেননা ধারাবাহিকতা আমলের মূল্য বৃদ্ধি করে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, ধারাবাহিক আমল, যদিও তা অল্প হয়। (বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪০)
পবিত্র কোরআনে যেসব মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে, যারা আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সে (নির্বোধ) নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতা শক্ত করে পাকিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯২)
ব্যস্ততার কারণে যদি কারো পক্ষে নিয়মিত আমলের কোনোটি পরিপূর্ণভাবে আদায় করা সম্ভব হয় না, এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আলেমদের পরামর্শ হলো তারা আংশিক হলেও আমল করবে। কেননা পরকালে সামান্য আমলও নিষ্ফল হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ নেক আমল করলে সে তা দেখবে।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৭)
আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উপকার হলো, ব্যক্তি যদি কোনো কারণে আমল করতে নাও পারে, তবে আল্লাহ তাকে আমলের সওয়াব দিয়ে দেবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় আমল করত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৬)
৪. অনুপ্রেরণাগুলো : ইসলাম মুমিন বান্দার অন্তরের এমন কিছু অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে রেখেছে, যা ব্যক্তিকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহিত করে। যেমন–
ক. আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা : ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করতে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা কোনো উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তাতে দ্বিগুণ ফলমূল জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয়, তবে লঘু বৃষ্টিই যথেষ্ট। তোমরা যা করো আল্লাহ তাঁর সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৬৫)
খ. উত্তম জীবনের প্রত্যাশা : মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪)
গ. উভয় জগতে মুক্তির আশা : মুমিন তার নেক আমলের মাধ্যমে উভয় জগতের মুক্তির আশা করে। আল্লাহও মুমিনদের দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও, আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০১)
৫. নিষ্ঠা ও পবিত্রতা : মুমিন আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে আমল করে এবং তার আমল শিরক ও পার্থিব প্রত্যাশার কলুষ থেকে মুক্ত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামাজ কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বাইয়িনা, আয়াত : ৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানব সকল! আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)