সুন্দর কথা ও উত্তম আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর কথা বলার বিনিময়ে কত সুন্দর প্রতিদানের কথাই না ঘোষণা করেছেন। হাদিসের ঘোষণা সুন্দর কথা বলার আমল ও এর প্রতিদানের কথাই তুলে ধরা হলো আজ।আল্লাহ তাআলা শুধু মানুষ ও জিনকে কথা বলার ক্ষমতা দান করেছেন। আচরণ, ভদ্রতা কিংবা মার্জিত ভাষায় কথা বলার ক্ষেত্রে মানুষের তুলনায় অন্য কোনো জীব সৃষ্টিজগতে নেই। আবার এ মানুষই কোনো কোনো সময় কথা ও কাজে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অনেক সময় কেউ কেউ চরম রুচিহীন কথা ও অভদ্র আচরণ করে থাকে।মানুষকে রুচিহীন অভদ্র কথা ও অভ্যাস থেকে বিরত রাখতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন চমৎকার সব আমল ও উপদেশ। কী সেই আমল ও উপদেশ?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরের সঙ্গে উত্তম ভাষায় কথা বলার নসিহত পেশ করেছেন। এটিকে ঈমানদারের বিশেষ আমল হিসেবেও নির্ধারণ করেছেন। এ আমলের সর্বোত্তম পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। হাদিসের বর্ণনায় তা ফুঠে ওঠেছে-
১. সাহাবি হজরত মিকদাম রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন জানতে চান, কী আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে? জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি উত্তম কথা বলো এবং মানুষকে খাবার দান কর। (সিলসিলাহ সহিহাহ)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, 4W3রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
দ্বীন প্রচারে উত্তম কথার গুরুত্ব ইসলামের প্রতিটি উপদেশে রয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণ। সুন্দর কথা এবং ভদ্র আচরণও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং সুন্দর ও নরম নরম কথায় মানুষ দ্বীনের বিধানের দিকে প্রভাবিত হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে এ ছোট্ট আমলটি করার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا
;আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে; (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩/> আয়াতে এমন কথাকে বুঝানো হয়েছে, যা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এর অর্থ এই যে, যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলবে; তখন নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে কথা বলা। নরম ও সুন্দর কথায় মানুষের মনে ভালো প্রভাব পড়ে।
পক্ষান্তরে দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য অথবা কারো মনোরঞ্জনের জন্য সত্য গোপন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সত্য কথার ওপর অটল-অবিচল থাকতে হবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা যখন মুসা ও হারূন আলাইহিস সালামকে নবুয়ত দান করে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখনও উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
فَقُوۡلَا لَهٗ قَوۡلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّهٗ یَتَذَکَّرُ اَوۡ یَخۡشٰی
;তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে। (সুরা ত্বহা : আয়াত ৪৪)
আজ যারা অন্যের সাথে কথা বলে, তারা মুসা আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে যেমন উত্তম নয়; তেমনি যার সঙ্গে কথা বলে, সেও ফেরাউনের চেয়ে বেশী মন্দ বা পাপিষ্ঠও নয়।সুন্দর কথার পুরস্কার কতই না উত্তম!
সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলাই ঈমানের একান্ত দাবি। সুন্দর কথার দ্বারা জান্নাত পাওয়া ছাড়াও আরও উপদেশমূলক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমরা সৎ কাজের সামান্যতম কিছুকে খাটো করে দেখ না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করা। (মুসলিম)
২. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বেদুঈন বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বালাখানা কার জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
যে ব্যক্তি মানুষের সাথে ভালো (উত্তম ভাষায়) কথা বলে;
যে ব্যক্তি অনাহারীকে খাবার দেয়;
যে ব্যক্তি রোজা রাখে; এবং
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক বর্ণনায় এসেছে যে, মানুষের সঙ্গে সদালাপের (সুন্দর কথার) অর্থ তা হচ্ছে- সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। (আত-তাফসীরুস সহীহা)
মনে রাখতে হবে ইসলাম মহান ও উদারতার ধর্ম। যারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়, তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পন করে। ইসলাম গ্রহণকারী কোনো ব্যক্তিই নিজ থেকে কোনো কথা বা কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। যখনই সে আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পন করবে তখন মুমিন ব্যক্তি সব কাজ ইসলামের বিধান অনুসারেই পরিচালিত হবে।
সুতরাং হাদিসের আলোকে সুন্দর কথা বলার প্রথম অনুপম শিক্ষা হলো- যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে গালাগাল দেয়; তারপরও ওই ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম ভাষায় সুন্দর কথা বলা। তবেই মহান আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে দান করবেন চিরস্থায়ী জান্নাত।সুন্দর কথার আমল মানুষকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। হাদিসে এ আমলের ঘোষণা-ই যে কাউকে কথা-বার্তায় শালিন হতে শেখাবে। এমনকি কারো গালাগালের বিপরীতেও উত্তম কথায় জবাব দেওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করবে। যারাই হাদিসের ওপর আমল করবে তারা হবে জান্নাতি। তারাই পাবেন জান্নাতের নেয়ামত বালাখানা ও ধৈর্যের প্রতিদান।