যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রমজানের ইবাদত কবুল হওয়ার আলামত

রমজান ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণের মাস। সে প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে হয় সারা বছর। ইসলাম ধর্মের ইবাদতগুলো শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব নয়। ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের মধ্যকার দর্শন ও অন্তর্নিহিত শিক্ষানুযায়ী জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইবাদত পালনের সার্থকতা।

রোজার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

রমজান মুসলমানদের জীবনে পরিবর্তন আনার মোক্ষম সুযোগ। তাই রমজানের পর পরিবর্তিত জীবনে ফিরে যাওয়াই রমজানের দাবি। আর যারা রমজানের প্রভাব ধরে রাখতে পারে না, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কারণ যে জীবনে সিয়াম পালন করার পরও হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করার প্রচেষ্টা থাকে না, সেখানে রমজানের কোনো গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয় না। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘দিনের বেলা সিয়াম রাখা এবং রাতের বেলা কিয়াম করার নাম তাকওয়া নয়। আবার সিয়াম ও তাহাজ্জুদ একসঙ্গে আদায় করার নামও তাকওয়া নয়; বরং আল্লাহ যা কিছু হারাম করেছেন তা বর্জন করা এবং যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন, তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করার নামই হলো প্রকৃত তাকওয়া।

আর যাকে আরো নেক আমলের তাওফিক দেওয়া হয়েছে, সেটা তো সোনায় সোহাগা। (বায়হাকি, আজ-জুহদুল কাবির, পৃ. ৩৫১)

রমজানের ইবাদত কবুল হওয়ার আলামত

রমজানের ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম প্রধান আলামত হলো, রমজানের পরও সেই বরকতময় মাসের আমল ও অভ্যাসগুলো ধরে রাখতে পারা। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘নেক আমলের প্রতিদান হলো সেই আমলের পরে আরেকটি ভালো আমল করতে পারা। আর পাপের পরিণাম হলো সেই পাপের পর আরেকটি পাপ করে ফেলা। কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কবুল করে নেন, তখন তাকে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দেন এবং তাকে পাপ থেকে দূরে রাখেন।

’ (মিফতাহু দারিস সাআদাত, ১/২৯৯; আরশিফু মুলতাকা আহলিল হাদিস, পৃ. ৩২১)

রমজানের অভ্যাসগুলো জারি রাখতে হবে

রমজান মাসে যে ভালো অভ্যাস অর্জিত হয়েছে, সেগুলো অল্প করে হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করা জরুরি। যেমন—পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করা, সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলো পাঠ করা, নিজের আমলের অগ্রগতির হিসাব রাখা, দান-সদকা বেশি বেশি করা, জিহ্বা-দৃষ্টি-কানের হেফাজত করা, মানুষকে খাওয়ানো, কোরআন তিলাওয়াত করা, সব সময় মনকে ঈমানি ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ রাখা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, পরিবার-পরিজনকে সময় দেওয়া, সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

আমরা যদি এই ভালো অভ্যাসগুলো নিয়মিত চর্চা না করি, তাহলে এগুলো আমাদের জীবন থেকে আবার হারিয়ে যাবে। রমজানের ভালো আমলগুলোর ব্যাপারে আমরা যদি একটু সচেতন হতে পারি, তাহলে সেই আমলগুলো ধরে রাখা খুবই সহজ। এর জন্য আহামরি কোনো পদক্ষেপের দরকার নেই; প্রয়োজন শুধু মানসিকভাবে সুদৃঢ় সংকল্পের। তা ছাড়া কোনো আমলের অভ্যাস শুরু করার পরে সেটা পরিত্যাগ করা সমীচীন নয়। কননা রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) -কে বলেছিলেন—হে আবদুল্লাহ! তুমি ওই ব্যক্তির মতো হয়ো না; যে কিয়ামুল লাইল আদায় করত, অতঃপর সেটা ছেড়ে দিল। (বুখারি, হাদিস : ১১৫২)

ইবাদতের সঙ্গে সারা বছর সখ্য গড়া

রমজান ইবাদতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। কোরআনের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপন করে। হালাল উপার্জনের প্রেরণা দেয় এবং পরিশ্রমের মানসিকতা তৈরি করে। রমজানের এই সর্বব্যাপী শিক্ষার আলোকে সারা বছর নিজের জীবন পরিচালিত করতে না পারলে নিছকই উপবাস থাকা ছাড়া রমজানে আমাদের আর কোনো অর্জন নেই।

এটা বাস্তব, যে ব্যক্তি রমজানের হক যত বেশি আদায় করেছে, রমজানের আদবগুলোর প্রতি যত বেশি যত্নবান থেকেছে, সে তার কর্মজীবনে রমজান ও ঈদের প্রভাব ও ক্রিয়া তত বেশি অনুভব করবে। আর যে ব্যক্তি ত্রুটি করেছে সে তার ত্রুটির মাত্রা অনুপাতে প্রভাব ও ক্রিয়ায়ও ত্রুটি উপলব্ধি করবে। রমজানের সবচেয়ে বড় প্রভাব তাকওয়া, যা বান্দাকে প্রতি মুহূর্তেই পথ প্রদর্শন করে, কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং অকল্যাণের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। অকল্যাণ থেকে বিরত থাকার তাগিদ সৃষ্টি করে। তাকওয়ায় পরিপূর্ণ অন্তর নসিহত দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয় ও সামান্য সতর্ক করার দ্বারা অমঙ্গলের পথ থেকে ফিরে আসে।

গুনাহমুক্ত জীবন জরুরি

গুনাহ যখনই করা হোক তা গুনাহ। তাই রমজান মাস চলে গেলে গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া যায়—এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তা ছাড়া নামাজ রোজার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। এটি প্রতিদিনের আমল। ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন। যে মুমিন অন্তত এটুকু চিন্তা করবে যে নামাজের মাধ্যমে মাটি দ্বারা সৃজিত এই দুর্বল মানুষ তার রবের দরবারে হাজিরা দিতে পারছে, তার প্রেমাস্পদ আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হচ্ছে, তার পক্ষে নামাজের ব্যাপারে কোনো শিথিলতা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে না; বরং অতি দুর্লভ অথচ সহজপ্রাপ্তি ভেবে মনে-প্রাণে নামাজের ব্যাপারে যত্নশীল হবে।