যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

কারো ব্যক্তিগত সম্মান নষ্ট করা অপরাধ

কারো ব্যক্তিগত সুনাম নষ্ট করা বান্দার হক নষ্ট করার অন্তর্ভুক্ত। এটি মানবাধিকার পরিপন্থী। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মুসলমান কর্তৃক অন্যের সুনাম, মর্যাদাকে নষ্ট করা তো দূরের কথা, বরং সর্বদা সে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে যে কখনো সে অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে কি না। ইকরামা (রা.) বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেছেন।

তিনি এই দোয়া করছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি মানুষ, মানুষসুলভ দুর্বলতাবশত আমি যদি তোমার কোনো মুমিন বান্দাকে কোনোভাবে আঘাত দিয়ে থাকি বা কোনোরূপ কষ্ট দিয়ে থাকি তবে এ জন্য আমাকে শাস্তি দিয়ো না।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬১০)

ইসলামী রাষ্ট্রে শাসকের জন্য কারো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কতটুকু এবং এই ক্ষেত্রে নাগরিকের অধিকার কতটুকু—ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা থেকে তা সহজে অনুমান করা যায়। আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি ওমর (রা.)-এর সঙ্গে মদিনার জনসাধারণের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বের হন। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটি বাড়ির মধ্যে প্রদীপ দেখতে পেলেন।

অতঃপর তাঁরা সেদিকে যেতে লাগলেন। তাঁরা বাড়ির নিকটবর্তী হয়ে দেখলেন দরজা আটকানো একটি ঘরের মধ্যে একদল লোক আছে এবং সেখানে উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ হচ্ছে। তখন ওমর (রা.) আবদুর রহমানের হাত ধরে বলেন, তুমি কি জান এ বাড়িটি কার? তিনি বলেন, না। ওমর (রা.) বললেন, এ বাড়ি রাবিয়াহ বিন উমাইয়া ইবনে খালাফের।

হয়তো তারা মদ পান করছে, তুমি কী মনে করো? আবদুর রহমান (রা.) বলেন, আমি মনে করি, আমরা আল্লাহর নিষেধকৃত পন্থায় এখানে এসেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের নিষেধ করে বলছেন, ‘তোমরা গোয়েন্দাগিরি কোরো না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

অথচ আমরা গোয়েন্দাগিরি করছি। এ কথা শুনে ওমর (রা.) তাদের ছেড়ে ফিরে এলেন। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৮৯৪৩; মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ৮১৩৬

কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেন লঙ্ঘন না হয় এবং কারো সুনাম নষ্ট না হয়, এ জন্য ইসলাম ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে বুশর (রা.) বলেন, ‘যখন কারো দ্বারপ্রান্তে কোনো ব্যক্তি উপনীত হবে এবং অনুমতি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে দাঁড়াবে, তখন একেবারে দরজার মুখোমুখি দাঁড়াবে না, বরং একটু ডান পাশে বা বাঁ পাশে সরে দাঁড়াবে। যদি অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ঢুকবে, নতুবা চলে যাবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০৭৮)

শুধু তাই নয়, ঘরে প্রবেশের অনুমতির আগে ঘরের ভেতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করাও নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য অনুমতি পাওয়ার আগে কোনো গৃহের অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করা জায়েজ নয়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০৯৩)

পরিশেষে কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশ করা কিংবা সম্মানিত ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করা মানবাধিকার পরিপন্থী হওয়ার পাশপাশি ইসলামের চোখেও গর্হিত অপরাধ।