কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

জামাতে নামাজে ইমামের পেছনে কে দাঁড়াবে

যথাসম্ভব জামাতের সঙ্গে আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করা। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জামাতে নামাজের সওয়াব তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত নামাজের সওয়াবের চেয়ে ২৫ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭)

এখন প্রশ্ন হলো, নামাজের কাতারে ইমাম সাহেবের পেছনে কারা দাঁড়াবে। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন প্রভাবশালী মানুষ দু-এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে এসে ইমামের পেছনে বসতে পছন্দ করেন। এর জবাব হলো, ইমামের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ। তবে ইমামের সরাসরি পেছনে এমন কারো দাঁড়ানো উচিত, যিনি কোরআন-হাদিসের জ্ঞান রাখেন, প্রয়োজনে ইমামের কোনো সমস্যা হলে ইমামতি করতে পারেন। হাদিসে এসেছে, আবু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নামাজের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, তোমরা সোজা দাঁড়াও এবং আগে-পিছে ছিন্নভিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ো না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়বে।

বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এই গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যায়ক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৫৮)

হাদিস শরিফে ‘বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী’ ব্যক্তিদের নবীজি (সা.)-এর কাছাকাছি দাঁড়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ ইমামের পেছনে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ওই ব্যক্তিকেই বলা হয়, যার কোরআন-হাদিসের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বেশি। এর প্রমাণ নবীজি (সা.)-এর আরেকটি হাদিস।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) উহুদের শহীদের মধ্য থেকে দুজনকে এক কাপড়ে একত্র করতেন, অতঃপর জিজ্ঞাসা করতেন যে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে কে বেশি পরিজ্ঞাত? যখন তাঁদের কোনো একজনের দিকে ইশারা করা হতো তখন তাঁকে কবরে অগ্রে শায়িত করে দিতেন এবং বলতেন যে আমি এদের জন্য সাক্ষী হয়ে রইলাম... (নাসায়ি, হাদিস : ১৯৫৫)

দরসে তিরমিজি নামক গ্রন্থে বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানীর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে কোরআন-হাদিসে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ইমামের পেছনে দাঁড়াবে, যাতে ইমামের কোনো সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে পেছনের লোকটি সামনে এগিয়ে গিয়ে ইমামতি করে বাকি নামাজ শেষ করতে পারে। অথবা ইমাম সাহেবের তিলাওয়াতে কিংবা নামাজের কোনো রুকনে ভুল হলে সঠিকভাবে লুকমা দিতে পারে। (দরসে তিরমিজি : ১/৪৮৬)

তবে কোরআন-হাদিসের জ্ঞান নেই এমন কেউ ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে গেলে নামাজ হবে না এমন কথা বলা যাবে না। আবার ইমাম যদি হাদিসের ওপর আমল করার স্বার্থে কোরআন-হাদিসে অজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে একটু সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন, তাহলে তা-ও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৯৮)

বরং নবীজি (সা.)-এর নির্দেশনাও এমনই।

তা ছাড়া ইসলামী শরিয়তে ইমামের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার একটি বিধান রয়েছে। তা হলো, কোনো সমস্যার কারণে ইমাম নামাজ শেষ করতে অপারগ হলে পেছনের কেউ ইমামের স্থানে এসে দাঁড়াবেন এবং সেই ব্যক্তি মুসল্লিদের নিয়ে বাকি নামাজ সম্পন্ন করবেন। এর প্রমাণ হলো, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন খাত্তাব (রা.) নামাজে ইমামতি করা অবস্থায় খঞ্জরের আঘাতে আহত হয়েছিলেন। তখন তিনি পেছন থেকে আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.)-কে সামনে নিয়ে আসেন। অতঃপর আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) মুসল্লিদের নিয়ে বাকি নামাজ সম্পন্ন করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭০০) (আল-মাউসুয়া আল-ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা : ২৫২/৩)